সাংবাদিকের সহায়তায় দু’মাস পর নিখোঁজ ছেলেকে ফিরে পেলো বাবা

405

॥ ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ॥
সন্তান নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস পর রাঙামাটির দুই সাংবাদিকের সহায়তায় ফিরে পেলো বাবা। সাংবাদিক মোঃ নুরুল আমিন ও বিহারী চাকমার সহায়তায় শুক্রবার সকালে বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি ১০ নং এলাকা থেকে নিখোঁজ ওই ছেলেকে উদ্ধার করে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

দুই মাস ৪ দিন আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছিল নিপুপালের ছোট ছেলে মিশুপাল (২০)। ভাইকে হারিয়ে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছিলেন বাবুল পাল । এছাড়া পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ ও ছাঁপানো হয় কিন্তু মিশুর খোঁজ মেলেনি। ছেলেকে হারিয়ে বেশ কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন মিশুপালের মা মনিকা পাল (৪৮)।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ হওয়া ছেলেটির নাম মিশু পাল (২০)। তার বাবার নাম নিপু পাল ও মাতার নাম মনিকা পাল। তাদের তিনজন ছেলে রয়েছে সবার চেয়ে মিশু পাল ছোট। তারা চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার আন্দার মানিক এলাকার বাসিন্দা।

নিখোঁজ হওয়া মিশুপালের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে রাগ করে বের হয় মিশু পাল। এরপর চট্টগ্রামের রেলওয়ে স্টেশন বটতলী এলাকায় গেলে কামাল নামের একজন প্রতারকের সাথে দেখা হয়। তখন সে মিশুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে জেলার বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের বরুনাছড়ি ১০ নম্বর এলাকার বাসিন্দা জেলে ইউসুফের কাছে নিয়ে আসে। তখন মিশুকে সেখানে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেয় প্রতারক কামাল। মিশু আরও জানান, গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) রাতে জেলে ইউসুপের অজান্তে তার সাথে কাজ করে এমন একজন ছেলের কাছ থেকে গান শুনার কথা বলে তার ফোনটি নিলো। এরপর সে তার বাড়িতে ফোন করে জানায়, সে রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের বরুনাছড়ি ১০ নম্বর এলাকায় আছেন।

বরকল উপজেলার স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের একটি প্রতারক চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাঙ্গামাটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করা হয়। বিক্রিত হওয়া ছেলেদের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছর। পরে স্ব-স্ব মৎস্যজীবিরা তাদের মাছ ধরার জালের খোপ টানার কাজে ব্যবহার করে।

এ সূত্রে আরও জানা গেছে, বর্তমানে মৎস্যজীবি ইউসুপের কাছে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতারকদের মাধ্যমে আসা আরও ৬ জন ছেলে রয়েছে। এরা হলেন,বরিশালের রকিব(২১), ঢাকা জেলার শাহিন (২৩), বাপ্পি (২৪), রনি(২২), চাঁদপুরের সুমন (২০) এবং উদ্ধার হওয়া মিশু পাল (২০)। এদের সবাইকে টাকা দিয়ে কিনে হওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জেলে ইউছুপ জানান, মিশুকে তিনি দুই মাসের জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। মিশুকে দিয়ে মাছ ধরার জালের খোপ টানার কাজে ব্যবহার করা হত। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আরও ৬জন ছেলে তার কাছে রয়েছে বলে জানা গেছে। যাদের মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মিশুপালের বড় ভাই বাবুল পাল বলেন, মিশু নিখোঁজ থাকায় গত দুই মাস ধরে বাড়িতে সবসময় দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় কাটছিলো সবার। বুধবার রাতে মিশুপাল মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় সে রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি ১০ নম্বর এলাকায় ইউসুফের বাড়িতে রয়েছে। কিন্তু বরুনাছড়ি কোথায় সেটা জানতাম না। সাংবাদিক বিহারী চাকমা ও নুরুল আমিনের সহযোগিতায় বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের বরুনাছড়ি ১০ নম্বর এলাকায় গিয়ে ছোটভাই মিশুপালকে খুঁজে পেলাম।

মিশুপাল গত দুই মাস ধরে জেলে ইউসুফের জালের খোপ টানার কাজ করছিল। সে একবারের জন্যও বাড়িতে ফোন করেনি। স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তা পড়ে যাই। হৃদরোগে আক্রান্ত মা ছোট ছেলেকে হারিয়ে কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। অসুস্থ মাকে নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ছোট ভাইকে ফিরে পেয়ে এখন খুবই ভালো লাগছে।

মিশুপালের বাবা নিপু পাল জানান, দুই মাস পর মিশু বুধবার রাতে তার বাবাকে ফোনে বলে সে রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি এলাকায় রয়েছে। এই সংবাদের ভিত্তিতে রাঙ্গামাটির দুই সাংবাদিকের সহযোগিতায় নিখোঁজ ছেলেকে ফিরে পান তার বাবা। এতে নিখোঁজ ছেলেকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা বাবা। তিনি আরও জানান, এভাবে বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক ছেলেকে নিয়ে আসছে একটি প্রতারক চক্র। তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওয়তায় আনার দাবি জানান তিনি।

সাংবাদিক নুরুল আমিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তার রুমের পাশে এক ভাড়াটিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন, দুই মাস ধরে মিশু পাল নামে একটি ছেলে নিখোঁজ রয়েছে। মিশু পাল বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি থাকায় সহকর্মী বিহারী চাকমাকে ফোন দেন নুরুল আমিন। যেহেতু, তিনি ঐ এলাকার বাসিন্দা। তার সহযোগিতায় নিখোঁজ মিশু পালকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে সাংবাদিক বিহারী চাকমা বলেন, শুক্রবার সকালে সহকর্মী নুরুল আমিন জানায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আন্দারমানিক গ্রামের বাসিন্দা নিপু পাল (৬৭) ছেলের খোঁজে রাঙ্গামাটি এসেছেন। তার ছোট ছেলে দুই মাস ধরে নিখোঁজ। তিনি জানতে পেরেছেন তার ছেলে বরুনাছড়ির ১০ নম্বর এলাকায় আছে। খবরটা জানার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মেম্বার ও বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও সুবলং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালামকে বিষয়টি জানালাম। এরপর ইউসুফের মোবাইল ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে কল দিয়ে নিশ্চিত হলাম তাঁর কাছেই মিশুপাল আছে। একটি স্পীডবোট ভাড়া করে নুরুল আমিন, বাবুন পাল ও নিপু পালকে সাথে নিয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে মিশুকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। হারানো ছেলেকে বাবার কাছে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করতে পারায় বেশ ভালো লাগছে। সহকর্মী নুরুল আমিনকেও ধন্যবাদ জানাই।

নিখোঁজ ছেলেকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে মানবিক সহযোগিতা দেয়ায় সাংবাদিক বিহারী চাকমা ও নুরুল আমিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ১নং সুবলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরুন জ্যোতি চাকমা।

উল্লেখ্য, বিহারী চাকমা বরকল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও জাতীয় দৈনিক আমাদের বাংলার রাঙামাটি প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর নুরুল আমিন জাতীয় দৈনিক মানবকন্ঠ পত্রিকার রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক পাহাড়ের সময় পত্রিকায় প্রধান বার্তা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। দু’জনই গণ্যমাধ্যমে নিবেদিত কর্মী হিসেবে মানবিক দায়িত্ব পালনে সর্বদা যতœশীল হয়ে কাজ করে আসছেন।