সিম্বল অব রাঙামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসে বিপাকে পড়ছেন পর্যটকরা

185

॥ মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥

পার্বত্য জনপদের মধ্যমণি অঞ্চলের নাম রূপসী রাঙামাটি। রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যে কোনো বয়সের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রতি বছর এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসে পাহাড়ি রাঙামাটিতে। ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ এবং পর্যটন সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আশির দশকের গোড়ার দিকে তৎকালীন সরকার রাঙামাটিকে পর্যটন শহর হিসেবে ঘোষণা করে এবং শহরের তবলছড়ি এলাকায় পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করে। পর্যটন করপোরেশনের আওতাভূক্ত এই কমপ্লেক্স এবং ঝুলন্ত সেতু সময়ের সাথে সাথে সিম্বল অব রাঙামাটি নামে পরিচিত হয়ে উঠে।

প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক রাঙামাটি পরিভ্রমণ করে যাওয়ার সময় একবার হলেও ঝুলন্ত সেতুটি পরিদর্শন করে এবং সেতুর উপর পায়ের ছাপ ফেলে।

কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এই সেতুটি এবং এর সংলগ্ন এলাকা শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। এর উপর অব্যবস্থাপনার কারণে ঝুলন্ত সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। ঝুলন্ত সেতুর আশেপাশে দীর্ঘ বছর ধরে নেই কোন ‘শৌচাগার’। বোট পারাপারে নেই কোনো পল্টুন বা ‘খেয়াঘাট’। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে যেমন পর্যটকদের চরম বিপাকে পড়তে হয় তেমনি পল্টুন না থাকায় বোট থেকে নামার সময় অনেক পর্যটক দুর্ঘটনার শিকার হন। পর্যটকরা এ বিষয়ে অভিযোগ এবং দাবি জানালেও কোন সুরাহ করেনি পর্যটন করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

ঝুলন্ত সেতু দেখতে রাজধানী ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক বেসরকারি চাকুরিজীবি আনিস রহমান বলেন- আমরা সারাদিন পুরো শহর ঘুরে এসে প্রশান্তির জন্য ঝুলন্ত সেতুটি দেখতে আসি। কিন্তু দু:খের বিষয়; ঝুলন্ত সেতুর আশেপাশে নেই কোন শৌচাগার। যে কারণে আমরা যারা দূর-দূরান্ত থেকে আসি তাদের প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে চরম লজ্জ্বায় পড়তে হয়।

একই অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী শাহেদা আনিস। তিনি বলেন- পুরুষরা যেখানে-সেখানে কাজ সাড়তে পারলেও আমাদের মতো নারীদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ; পর্যটকদের কথা ভেবে দ্রুত এখানে শোচাগার নির্মাণ করে দেয়।

ঝুলন্ত সেতু দেখতে চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ীক পর্যটক দলের অন্যতম সদস্য ব্যবসায়ী ফোরকান আহম্মেদ ক্ষোভের সাথে বলেন- আমাদের মতো পর্যটকরা আসলে এ অঞ্চলের পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু আমরা যদি এখানে এসে যদি সঠিক ভাবে পরিসেবা না পায় তাহলে কেন আসবো? এখানে কোন শোচাগার নেই। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পর্যটকদের বিপাকে পড়তে হয়।

পর্যটক রেহানা পারভীন দু:খের সাথে বলেন- আমি বোট থেকে নামতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি। এখানে যদি বোটগুলো রাখার জন্য খেয়াঘাট দিতো তাহলে আমরা বোট থেকে সরাসরি ঘাটে নামতে পারতাম। কোন দুর্ঘটনা ঘটতো না।

রাঙামাটি বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন- পর্যটকরা বেড়াতে এসে যখন শোচাগার খুঁজে পায় না তখন তারা লজ্জ্বায় পড়ে যায়। তারা আমার কাছে আসলেও আমি তাদের শোচাগারের ঠিকানা দিতে পারি না।

বোট মালিক সমিতির এ নেতা আরও বলেন- বোট পারাপারের জন্য এখানে কোন খেয়াঘাট নেই। তাই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি- পর্যটকদের সুবিধার জন্য দ্রুত এ সকল সমস্যা নিরসন করে দেয়।

পর্যটন করপোরেশন রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন- ঝুলন্ত সেতুর আশেপাশে শোচাগার স্থাপনের জন্য ট্যুরিজম বোডর্কে জানানো হয়েছে। করোনার কারণে আমাদের কাজ এগোয়নি।

বোট পারাপারে নির্দিষ্ট ঘাট নেই কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান-আমি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে বলেছি এখানে বোট পারাপারে জন্য পল্টন (খেয়াঘাট ) নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে বোট পার্ক বাবদ টাকা চাই। যে কারণে আমরা পল্টন স্থাপনে নৌ পরিবহন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেনি। নিজেদের উদ্যোগে পল্টন নির্মাণ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- আপাতত নেই