সেচ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিই যে চাষিদের একমাত্র ভরসা

191

॥ এম.নাজিম উদ্দিন ॥

প্রকৃতির কোলে চাষ করা চাষিদের সেচ এর ক্ষেত্রেও একমাত্র ভরসা প্রকৃতি। আবার প্রকৃতির উৎস্য ছড়া-ঝর্ণাও তাদের নাগালের বাইরে তাই একমাত্র ভরসা বৃষ্টি পানি। এমন অনিশ্চয়তায় চাষ করা প্রায় ৫০ কানি জমির ধান চাষিরা এবার শঙ্কিত কারণ এবর হয়নি কাঙ্খীত বৃষ্টি। তারপরও দমে নেই তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পাথার ঘাম পায়ে ফেলে যতœ করে যাচ্ছেন ফসলের। আশা বুক বেঁেধ পরম মমতায় বড় করে তুলছেন ধান গাছ। নানিয়ারচরের লাঙ্গলপাড়া এলাকায় এমনি অনিশ্চয়তায় ৫র কানি জমিতে ধান চাষ করেছে সাহসি কৃষকেরা।

ধানের চাষ হচ্ছে, কিন্তু সেখানে নেই কোন প্রকার পানি সেচের ব্যবস্থা। পাহড়ি জনপদের অধীকাংশ ধানের জমিতেই পানি সেচের জন্য নদীর পানি বেশ দূরে হওয়ায় ঝর্ণা বা ছড়ার পানির উপর নির্ভর করতে হয় কৃষকদের। আবার কিছু কিছু জমিতে নদী ও ছড়া বহু দূরে হওয়ায় বিকল্পভাবে কোন পানি সেচের ব্যবস্থা থাকে না, তাদের ভরসা থাকে একমাত্র বৃষ্টির পানি।

নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের লাঙ্গল পাড়া এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একমাত্র বৃষ্টিই হচ্ছে তাদের পানি সেচের ভরসা। তাই অন্য মৌসুমে ধানের চাষ না করে সেখানে কেবল বর্ষা মৌসুমে ধান চাষ হয় এবং পানি সেচের যদি বিকল্প ব্যবস্থা করা হয় তবে সারা বছরই ধান চাষের উপযুক্ত হবে এই জমিগুলো।

সেখানকার কৃষক অমর জীবন চাকমা জানায়, জমিতে এবার বাসন্তী ধান চারা লাগিয়েছি, পানি আনার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই যখন বৃষ্টি হয় সেই আশায় বসে থাকি। কতৃপক্ষ আমাদের পানির ব্যবস্থা করে দিলে আমরা খুব উপকৃত হবো এবং ধান চাষের পরিমানও বাড়বে।

কৃষাণী মিনতী চাকমা বলেন, বৃষ্টি আসলে ধান লাগাতে পারি, না হয় পারিনা। পানির সমস্যায় আমাদের অন্য মৌসুমে চাষের সম্ভাবনা হয়না। যদি বৃষ্টি না হয় আমাদের কপালে হাত দিতে হয়, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি বৃষ্টি কখন আসবে। অনেক কষ্ট করে দিনভর পরিশ্রম করে ধান লাগিয়েও সফল না হলে খুব কষ্ট হয়।

কৃষক বিমল কান্তি চাকমা বলেন, আমরা এই পাড়ায় প্রায় ২৫/৩০ জন কৃষক ধান চাষ করছি ৫০ কানি জমিতে এবং পানি সেচের ব্যবস্থা না থাকায় আমরা আগ্রহ হারাচ্ছি। বর্তমানে ধানের পাশে আগাছা পরিস্কারের কাজ চলছে, পানি সেচের জন্য সরকারি ভাবে যদি ব্যবস্থা নিত আমরা সবাই উপকৃত হতাম।

এ বিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা সহ-কৃষি কর্মকর্তা মো. ইসহাক উদ্দিন জানায়,‘উপজেলার লাঙ্গল পাড়া এবং জুড়াছুড়ির কিছু জমিতে পানি সেচের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই জেলা পরিষদ বরাবর পানির ব্যবস্থার লক্ষ্যে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এ সকল জমিতে কেবল বর্ষা মৌসুমে ধান চাষ করা হয়,বাকি সময় গুলো খালি পড়ে থাকে। যদি সব মৌসুমে চাষের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে চাষীরা উপকৃত হবে এবং অর্থনৈতিক অবস্থাও ভাল হবে।’

নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা জানিয়েছেন, ‘উপজেলার লাঙ্গল পাড়া থেকে শুরু করে জুরাইছড়ি অনেকগুলো এলাকায় কেবল বর্ষা মৌসুমে ধান চাষ হয়। আবার অনেকগুলো এলাকায় পানি সেচের ব্যবস্থা না থাকায় বহু জমি সেখানে পরিত্যক্ত রয়েছে। যদি সেখানে পানির ব্যবস্থা করা যেত তাহলে সবাই উপকৃত হতো। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বরাদ্দ নেই। তাই জেলা পরিষদ বা উন্নয়ন বোর্ড’র প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সেখানে পানি সেচের ব্যবস্থা করে দিলে ধান চাষে কৃষকরা উপকৃত এবং আগ্রহী হবে।’