স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উন্নয়ন ও পার্বত্য প্রেক্ষাপট

485

॥ রাঙামাটি রিপোর্ট ॥
আজ বাঙালি জাতির এবং বাংলাদেশের এক মাহেন্দ্রক্ষণ। জাতি আজ পালন করতে যাচ্ছে স্বাধীনতার
সুবর্ণজয়ন্তী। অধিকার সচেতন বাঙালি জাতির স্বাধীকার স্বপ্নে করা সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী আজ দেশব্যপী উদাপিত হচ্ছে। শুধু ১৯৭১ সালের যুদ্ধই আমাদের স্বাধীন ভূখন্ড এনে দিয়েছিল এমন নয়, এরও অনেক আগে ৪৭ এর দেশ বিভাগ এবং ৫২ ভাষা আন্দোলনের সিড়ি বেয়ে একজন মানুষ বাঙালি জাতিকে বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন; জাতির জন্য স্বতন্ত্র ভূখন্ডের জন্য, নিজের মর্যাাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য শত জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে যিনি ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে জাতির সামনে স্বাধীনতার পথ-নকশা এঁকে দিয়েছিলেন, তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা ভাগ্যবান যে, আমরা এখন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালেই পূর্ণ হলেও জন্মশতবার্ষিকীর রেস চলছে দেশব্যপী। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর রেস থাকতে থাকতেই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। এ যেন বিধাতা নির্ধারিত এক অদ্ভুৎ যোগ পরিক্রমা।

৭১ এ নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করা আমাদের স্বতন্ত্র পতাকা আর স্বাধীন দেশের বয়স এখন ৫০ বছর। পশ্চিমা গোষ্ঠী শোষণের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে শূণ্য থেকে শুরু করা সেই দেশের সুবর্ণ জয়ন্তি আমরা যখন পালন করতে যাচ্ছি, তখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে এই সুপারিশ জাতিকে আরো উচ্ছ্বসিত করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই প্রাপ্তি বিরাট অর্জন। দেশকে গণতন্ত্রের পথে, সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে নেওয়ার পথে এ এক পরম আরাধ্য প্রাপ্তি। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে বঙ্গবন্ধু সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই দেশ আজ এই অবস্থানে পৌঁছেছে।

সেই ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকে ছাপা হয়েছিল পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের একটি কবিতা। ‘বঙ্গ-বন্ধু’ শিরোনামে সেই কবিতায় তিনি লিখেছিলেন-
‘মুজিবর রহমান/ ওই নাম, যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি-উদারী বান।’

সেই শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী আমরা পালন করেছি মাত্র কয়েকদিন আগে; যার হাত ধরে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, দেশের মানুষ ভালোবেসে যাকে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু উপাধি, স্বাধীন দেশের সংবিধান যাকে দিয়েছে জাতির পিতার স্বীকৃতি।

তার হাত ধরেই বাঙালি পেয়েছিল স্বাধীনতার দিশা; অর্ধ শতকের পথচলায় অর্থনৈতিক মুক্তির যে সোনালি দিগন্তের সামনে আজ বাঙালি দাঁড়িয়ে, তারও অনুপ্রেরণা তিনি।

বঙ্গবন্ধু প্রকৃতি ঘেরা এই পাহাড় আর পাহাড়ের মানুষকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালো বাসতেন। তাইতো তার মাত্র পাঁচ বছরের শাসনামলে তিনি বারবার ছুটে এসেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। এর মধ্যে একবার ৭৩ সালে এবং বাকি দুইবার ৭৫ সালেই। তিনি পাহাড়ের মানুষকে দেখিয়েছিলেন উন্নয়নের স্বপ্ন। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে একটি স্বতন্ত্র উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

য়ড়যন্ত্রকারীদের বুলেটের আঘাতে তিনি নির্মমভাবে শাহাদাত বরণের পর একুশ বছর বাদে ক্ষমতায় আসেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা প্রতিটি বাক্য বাস্তবায়নে প্রয়াসি হন। পাহাড়ের উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর সম্পন্ন করেন পার্বত্য শান্তিচুক্তি। কালজয়ী এই চুক্তির রেশ ধরেই গোটা বাংলাদেশের সাথে এখন এক সময়ের পিছিয়ে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামও উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে এসেছে।