হেডম্যান নেটওয়ার্কের সম্মেলনে সন্তু লারমা: যতদিন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হবে না ততদিন পাহাড় অশান্ত থাকাবে

430

মোঃ হান্নান- ১১ জুন ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি:  পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়। ১৯ বছর কেটে গেছে, চুক্তি বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি নেই। যতদিন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হবে না, ততদিন পাহাড় অশান্ত থাকবে। তাই চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের উপর চাপ বাড়াতে হবে। তিনি বলে চুক্তি বাস্তবায়নে যদি সরকারের স¦দিচ্ছা থাকতো তাহলে অনেক আগে পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা রাখতো। তিনি বলেন, এ আন্দোলনে নারী-পুরুষ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রোববার রাঙামাটিতে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী “পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান-কার্বারী সম্মেলন” অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। আদিবাসী সমাজ উন্নয়নে নারী প্রতিনিধিত্ব অত্যাবশ্যক এই স্লোগানকে সামনে রেখে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের আয়োজনে ২ দিন ব্যাপী রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান-কার্বারী সম্মেলন শুরু হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সন্তু লারমা আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে নারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি শৃঙ্খলা অগ্রগতি সাধন করতে হবে। ১৯৬০ সালে রাঙামাটিতে কাপ্তাই বাঁধের কারনে পার্বত্য এলাকার মানুষ এখন দিশেহারা। ১৯৬০ সালের আগে পার্বত্য অঞ্চলে এত অভাব ছিল না, ছিল শান্তিতে পরির্পূণ। পার্বত্য অঞ্চল ছিল শ্যামল সবুজে ভরা। প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ যেন সবাইকে মুগ্ধ করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পনার জন্য ১৯৬০ সালের কাপ্তাই বাঁধ পার্বত্য অঞ্চলে মানুষের মরন ফাঁদ হিসেবে পরিণত হয়েছে। যার কারনে পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এমনকি পার্বত্যাঞ্চলে জনজীবনে কাপ্তাই বাঁধ হুমকি স্বরুপ দাঁড়িয়েছে।

১১ জুন (রবিবার) সকাল ১০ ঘটিকার সময়ে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটে সিএইচটি হেডম্যান নেটওর্য়াকের সহ-সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে উদ্বোধক হিসেবে চাকমা সার্কেল চীফ, ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, প্রধান অতিথি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু) বিশেষ অতিথি হিসেবে বরকল উপজেলা চেয়ারম্যান মনি চাকমা, জেন্ডার এন্ড লোকাল কনফিডেন্স বিল্ডিং ক্লাস্টার ইউএনডিপির টিম লিডার ঝুমা দেওয়ানসহ তিন পার্বত্য জেলার সকল হেডম্যান-কার্বারী প্রতিনিধিগণ ও অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, অনুষ্টানে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, লংগদুতে যে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে গেল সত্যি মানবাধিকার লঙ্গিত হয়েছে। লংগদুর ঘটনায় গুণবালা চাকমা নামে সত্তরোর্ধ এক নারী মারা গেছেন। ১৯৮৯ সালের ৪ মে সেখানে একবার এই ধরনের ঘটনা হয়েছিল। সেখানেও মানুষ মারা যায়। সে সময় তারা আত্মীয় স্বজন হারিয়েছিল। এবার যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৮৯ সালেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে ঘটনা কি সরকার ভুলে গেছে? সেখান থেকে সরকার কি শিখতে পারেনি যে, এ ধরনের মৃত্যু হলে, মিছিল হলে এই ধরনের আক্রমণ হয়। কিন্তু কেন মিছিল করতে দেয়া হলো? হেডম্যান-কার্বারীদের চুপ করে থাকলে হবে না। কথা বলতে হবে। সাহস করে এ সব কথা বলতে হবে। চাকমা রাজা বলেন, চুক্তি পরবর্তী পাহাড়ি গ্রামে বাঙালিরা আক্রমণ করেছে এমন উদাহরণ আছে। কিন্তু বাঙালি গ্রামে পাহাড়িরা আক্রমণ করেছে এই ধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি। কিন্তু পাহাড়ি গ্রামে কেন আক্রমণ হয়? তাহলে কি বলতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি শুধু একটি জনগোষ্ঠীর জন্য?  দেবাশীষ রায় আরো বলেন, আমি লংগদুর ঘটনার যা দেখেছি তাতে আমার এক চুল সন্দেহ নেই যে, সেদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিরপেক্ষ ছিল না। এটার যথাযত তদন্ত করা হোক।

তিনি বলেন, আমি নয়ন হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার কামনা করছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না নয়ন হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা নকল না আসল। এর বিচার যেন যথাযত হয়। যেন ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা আর না ঘটে।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এসব ঘটনা বাড়ছে উল্লেখ করে দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে মিশ্র পুলিশ বাহিনী করা হত তাহলে এই ধরণের ঘটনা হত না। হলেও এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হত।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান