৮ ডিসেম্বর রামগড় হানাদার মুক্ত দিবস

563

p...3

লিটন ভট্টাচার্য্য রানা, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি :  ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় ১নং সেক্টরের রামগড় মহকুমা। ভারত সীমান্তবর্তী খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১নং নম্বর সেক্টরে অন্তর্গত ছিল। মেজর রফিকুল ইসলাম ও মেজর জিয়াউর রহমান দীর্ঘ সময় রামগড় সেক্টরে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রামগড়ের বিপরীতে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবব্রুমে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়কে আরো বেশী স্মরণীয় করে রেখেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের ত্যাগে। রামগড় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৫০০ তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধাপযোগী করে তুলেন। পরবর্তীতে ১০ এপ্রিল ৫০জনের একটি দল নিয়ে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রামগড় ত্যাগ করেন আফতাবুল কাদের। ২৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বুড়িরঘাট এলাকায় পাক সেনাবাহিনীর সাথে এক সম্মুখ যুদ্ধে গুরুত্বর আহত হন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের। আহতাবস্থায় সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে রামগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথিমধ্যে প্রাণযুদ্ধে হেরে যান কাদের। মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন রামগড় উপজেলা ব্যবহার হয়েছে রুত্বপূর্ণ এক ট্রানজিট হিসেবে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের প্রদেশগুলোতে শরণার্থী আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা হয়।

ডিসেম্বর মাসে সারাদেশের মতো রামগড়েও তীব্র হয়ে উঠে শত্রু মোকাবেলার স্পৃহা। শক্তি হিসেবে যোগ হয় ভারতের মিত্র বাহিনীর সহায়তা। রামগড়ে তুমুল যুদ্ধ হয় ডিসেম্বরের ৭ তারিখ থেকে। ওই দিন সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে মিত্র বাহিনীর (ভারতীয় বিমান বাহিনী) তিনটি যুদ্ধ বিমান রামগড়ে অবস্থানরত পাক-বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে কয়েক দফায় বোমা হামলা চালায়। সমানতালে স্থলভাগে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর আক্রমণ চলতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে কোণঠাসা হওয়ার উপক্রম হলে সন্ধ্যা থেকে পিছু হটতে থাকে পাক-সেনাবাহিনী। পরের দিন আবারো একই পন্থায় এগোতে থাকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। ৭ ডিসেম্বরের ক্ষয়ক্ষতির কথা ভেবে ও ৮ ডিসেম্বরের হামলায় কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পেরে বিকেলে লেজ গুটিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা পালিয়ে যায়।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে রামগড় জুড়ে আনন্দ মিছিল বের হতে থাকে। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা রামগড় প্রধান ডাকঘরে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে এবং হানাদার মুক্ত হয় রামগড়। উল্লেখ্য, রামগড় শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টরের জন্য উল্লেখ্যযোগ্য নয় বাংলাদেশ রাইফেলস বা বর্তমান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জন্ম লাভ করে সীমান্তবর্তী রামগড়ে মহকুমা থেকে। ১৯২০ সালের প্রাচীন মহকুমা শহর থেকে রামগড় উপজেলা হলেও এটিকে এখন জেলায় রূপান্তরিত করা সময়ের দাবী।
আজ ৮ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি রামগড়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রামগড় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও সুধী সমাজের অনুষ্টানের যোগ দেবেন।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান