॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের যাবতীয় বৈদ্যুতিক চাহিদা এখন সৌর বিদ্যুৎ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব এই পদ্ধতির কারণে যেমন বোর্ডের বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় হচ্ছে, তেমনি জাতীয় গ্রীডের উপর কিছুটা হলেও চাপ কমানো সম্ভব হয়েছে। এ তথ্য উল্লেখ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, এনডিসি বলেছেন, জলবায়ু তহবিলের টাকা এই খাতে ব্যয় করে যথার্থ একটি পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে উন্নয়ন বোর্ড। চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এর অর্থায়নে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে বিদ্যমান সকল অফিস কক্ষ সোলার সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
মঙ্গলবার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে ‘পরিচালনা বোর্ড’ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এই তথ্য প্রকাশ করেন চেয়ারম্যান। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের ৩য় এই বোর্ড সভা বুধবার সকালে বোর্ডের কর্ণফুলী সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, এনডিসি। সভায় চেয়ারম্যান বলেন, রাবার চাষ প্রকল্পসমূহে ইতোমধ্যে যেসব রাবার গাছের বয়স উত্তীর্ণ হয়েছে. কমিটির মাধ্যমে চিহ্নিত করে সেগুলো কর্তন করে ফেলা হবে। ওইস্থানে উপকারভোগীদের জন্য বিকল্প জীবিকায়ন হিসেবে চা অথবা মিশ্র ফলের উন্নত চারা রোপন করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস এর কারিগরী সহযোগিতায় তিন পার্বত্য জেলায় চলমান পানির উৎসমুখ জরীপ কার্যক্রম অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এছাড়া বোর্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংস্কার, একজন আইনজীবি নিয়োগ, রাঙামাটি অবতরণ জেটিঘাট নির্মাণ, প্রকল্পের নাম পরিবর্তন ও অনুমোদন প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় নির্বাহী প্রকৌশলীগণ বোর্ডের আওতাধীন কোড নং ২২০০১১০০, ২২০০০৯০০ এবং পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত প্রকল্প/স্কিমসমূহের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের অগ্রগতি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে উন্নত জাতের বাঁশ উৎপাদন প্রকল্প, গাভী বিতরণ প্রকল্প, মসলা চাষ প্রকল্প, মিশ্র ফল চাষ প্রকল্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প, খাগড়াছড়ি সদরে মাস্টার ড্রেইন নির্মাণ, তিন পার্বত্য জেলায় গ্রামীণ সড়ক ও পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রককল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকগণ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অগ্রগতি অবহিত করেন।
সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল (১) গত ১৮ নভেম্বর, ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন এবং গৃহীত সিদ্ধান্তরে অগ্রগতি পর্যালোচনা (২) ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রা উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত সময়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং (গ) বিবিধ আলোচনা। উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য পরিকল্পনা ও সদস্য প্রশাসন উপসচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পরিচালনা বোর্ড সভায় নবাগত ৯১তম রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকসহ উপস্থিত সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
সভায় বক্তব্য রাখার সময় রাঙামাটির নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন কারণে স্কুল ঝরে পরার হার বেশী। তাই এ বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোঃ নূরুল আলম নিজামী পার্বত্য প্রত্যন্ত এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শিক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অবদানের বিষয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলায় ৪৫০০টি পাড়াকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। সেখানে ৩-৬ বছরের বিভিন্ন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সুবিধা বঞ্চিত ছেলে-মেয়েরা নিজ মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে এবং লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে।
সভায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য জনাব ক্যসাপ্রু বলেন, ইদানিং বান্দরবান পার্বত্য জেলায় অসাধু ব্যবসায়ী দ্বারা বেশী মাত্রায় পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে অনুরূপভাবে ঝিরি ঝরর্ণাগুলোতে দিন দিন পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই পরিবেশ রক্ষায় ব্রীজ/কালভাট/রাস্তা নির্মাণের সময় যাতে কোন স্থানীয় পাথর ব্যবহার না হয় এবিষয়ে সভাপতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জায়গায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে খাগড়াছড়ির জার্মপ্লাজম সেন্টারের ন্যায় বান্দরবান পার্বত্য জেলাতে মিশ্র ফলজ বাগানের প্রদর্শনী প্লট তৈরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষ রোপনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোঃ নূরুল আলম নিজামী, সদস্য পরিকল্পনা ও সদস্য প্রশাসন উপসচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, সদস্য-বাস্তবায়ন উপসচিব মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক রাঙ্গামাটি, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি সদস্য ক্যসাপ্রু, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি ইলিপন চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি শুভমঙ্গল চাকমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মোঃ আবদুল আজিজ, খাগড়াছড়ি ইউনিট কার্যালযের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মুজিবুল আলম, বান্দরবান ইউনিট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত, মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম, টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন মোহাম্মদ এয়াছিনুল হক, খাগাড়াছড়ি জেলার টেকসই সামাজি সেবা প্রদান প্রকল্পের জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান, রাঙ্গামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী চলতি দায়িত্ব তুষিত চাকমা, উপসচিব মংছেনলাইন রাখাইন, কাইংওয়াই ম্রো, গবেষণা কর্মকর্তা, বাজেট ও অডিট অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান, জনাব মোঃ কামরুজ্জামান, সহকারী প্রকল্প পরিচালক মিশ্র ফল চাষ প্রকল্প, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সমন্বয় কর্মকর্তা, মিজ ডজী ত্রিপুরা তথ্য কর্মকর্তাসহ বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।