॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে, পালন করছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, তখনও খোদ শহরের মাঝেই বাঁশের সাকো দিয়ে পার হচ্ছে মানুষ; ‘এ যেন মানবতার প্রতি তামাশা’। এমন দৃশ্য চোখে পড়বে রাঙামাটি সদরের মাঝেরবস্তি পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায়। এই ছোট্ট জনপদের মানুষ দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে দাবি জানিয়েও একটি সেতুর ব্যবস্থা করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনের পর দিন নদী পারাপার করতে হচ্ছে সেখানকার বসবাসরত বাসিন্দারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁকোটির দুই পাশে বাঁশের হাটল। সেটি উঁচু-নিচু অবস্থায় আছে। চলার সময় সেটি দোলতে থাকে। আর প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর নিচে নেমে গেলে পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এ বাসিন্দাদের চলাচল স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু প্রতি বর্ষা মৌসুমে চার মাসের জন্য স্থানীয়দের আবার নতুন করে সাঁকো তৈরি করে নদী পারাপার করতে হয়। এ সাঁকো দিয়ে শিক্ষার্থী, বৃদ্ধসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। আর প্রতি বছর সাঁকোর পেছনে খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দরা জানান, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে জেলা সদরসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের ছোয়া লাগলেও তাদের এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া এখনো এসে পৌঁছাইনি। এলাকায় কেউ যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে তাকে সাঁকো দিয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কঠিন। আর আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসারও কোনো উপায় নেই।
এলাকার বাসিন্দা সন্তোষ কুমার দে, নুরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার এ আধুনিক যুগে এসেও মাঝেরবস্তির পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় নদীর ওপর আজও কোনো সেতু নির্মাণ হয়নি। একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনও নৌকা আবার কখনও বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন এলাকার মানুষ। প্রয়োজনের তাগিদে যাচ্ছেন তবলছড়ি বাজার, রিজার্ভ বাজার ও বনরূপা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়।
ধোপা পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা রাবেয়া বেগম (৬৫) বলেন, আমি কোনো সময় এই সাঁকো দিয়ে দাঁড়িয়ে হেঁটে যেতে পারি নাই। ভয়ে সব সময় বসে বসে পার হই। এতে অনেক ক্ষণ সময় লাগে। আর নিজের দিকে তাকালে মনে হয় পড়ে যাচ্ছি। তখন গা হাত কাঁপতে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা অলি আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে এলাকার মানুষ কষ্ট করে পারাপার হচ্ছেন। এখানে একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দাবি থাকলেও কারও যেন মাথা ব্যথা নেই। প্রতিবছর এই বাঁশের সাঁকো তৈরি করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা। আর বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করতে সময় লাগার কারণে ভাড়ায় চালিত নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তাও মাঝে মধ্যে নৌকা পাওয়া যায় না। বর্ষা মৌসুমে ঝড় বৃষ্টিতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার যেমন বিপজ্জনক হয়ে পড়ে তেমনী দূর্ভোগ হয় দ্বিগুন।
আরেক বাসিন্দা বাবুল শুক্লা দাশ জানান, এলাকায় রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা গর্ভবতীদের নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আর সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীকে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা ঝুঁকির সঙ্গে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। তাই এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের।
এ বিষয়ে রাঙামাটি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলক দে জানান, বিষয়টি জানা ছিলো না। তবে যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানতে পেলাম দু’একদিনের মধ্যে সরেজমিনে দেখে এলাকা পরিদর্শন করে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হবে যাতে করে যত দ্রুত সম্ভব জনগণের কষ্ট লাঘবে সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়া হয়।
এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করে স্থানীয় বাসিন্দারা। অবিলম্বে সাঁকোর স্থলে আরসিসি সেতু নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।