॥ আলীকদম প্রতিনিধি ॥
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতায় আলীকদম উপজেলায় পাড়াকেন্দ্র নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২০১৯-২০২১ মেয়াদে বাস্তবায়িত টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের মাধ্যমে কুরুকপাতা ইউনিয়নে এসব পাড়াকেন্দ্র নির্মাণে বরাদ্দ ছিল।
সরেজমিন অনুসন্ধকালে জানা গেছে, নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার এবং কেন্দ্র নির্মাণের পর শ্রমিক মজুরী পরিশোধ না করে পালিয়েছেন প্রকল্পের এপিএম আশীষ চাকমা। তবে ‘এ নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ করলে মন্ত্রী মহোদয় রাগ করবেন’ জানিয়ে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন উপজেলা প্রকল্প পরিচালক (ইউপিএম) মোঃ শফিকুর রহমান।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৯-২০২১ মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় আলীকদম উপজেলার দুর্গম ইউনিয়ন হিসেবে খ্যাত কুরুকপাতা ইউনিয়নে প্রকল্পের সম্প্রসারিত অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পের আওতায় আলীকদমে ২০টি পাড়াকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, পাড়াকেন্দ্র নির্মাণের জন্য নির্ধারিত প্রাক্কলন ও ডিজাইন অনুসারে প্রতিটি পাড়াকেন্দ্র নির্মাণে ২ লক্ষ ৭ হাজার টাকা বরাদ্ধ ছিল। প্রত্যেক কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত ১টি করে হ্যান্ডওয়াশিং ষ্টেশন ও ১টি করে লেট্রিন নির্মাণ বাজেটে উল্লেখ আছে।
কুরুকপাতা ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়া কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বাস্তবায়নকারী সংস্থা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্ধারিত প্রাক্কালন ও ডিজাইন অনুসরণ করা হয়নি। নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কয়েকটি পাড়া কেন্দ্র তৈরী হয়। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পভূক্ত কয়েকটি পাড়াকেন্দ্র নির্মাণ না করে অর্থ লোপাট করা হয়েছে।
কুরুকপাতা বাজারের পাশে ২০২০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় আওয়াই পাড়া কেন্দ্র। সেটির মেঝে ইতোমধ্যে ভেঙ্গে চৌচির হয়েছে। হ্যা-ওয়াশ ষ্টেশন করা হয়েছে বারান্দায় একটি বেসিন দিয়ে। সেখানে পানির কোন সংযোগ লাইন নেই। অদূরে একটি টিনের তৈরী ল্যাট্রিন থাকলেও সেখানে নেই কোন পানির ব্যবস্থা।
তাছাড়া, কাইংপা পাড়া, মেনলিউ পাড়া, রালাই পাড়া, পোয়ামুরি বাজার, কমচং পাড়া পাড়া কেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে পাহাড়ের কাঠ বাঁশ দিয়ে। যা ইতোমধ্যেই ভঙ্গুরদশায় পতিত। পাড়ার লোকজনকে দিয়ে এসব কেন্দ্র নির্মাণ করে শ্রমিক মজুরী পর্যন্ত পরিশোধ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজেট বরাদ্দ থাকা সত্বেও কয়েকটি কেন্দ্রে নামেমাত্র এবং একাধিক কেন্দ্রে মেটেও হ্যান্ড ওয়াশিং ষ্টেশন নির্মাণ করা হয়নি।
সম্প্রতি কুরুকপাতা বাজারে রালাই পাড়ার বাসিন্দা মেনপিও ¤্রাের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, তাদের পাড়ায় যে পাড়াকেন্দ্রটি নির্মাণ হয়েছে তা সম্পূর্ণ পাড়ার লোকজন করেছে। তাদেরকে মজুরী খরচ পর্যন্ত দেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় মারান ¤্রাে জানান, প্রকল্পের কর্মকর্তা আশীষ চাকমা মিস্ত্রীর সাথে চুক্তি মাধ্যমে কেন্দ্রগুলি নির্মাণ করেন। প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও স্থানীয়রা এ ব্যাপারে কিছুই অবগত নন। যেসব পাড়া কেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে তাতে ৫০/৬০ হাজার টাকার বেশী নির্মাণ ব্যয় হয়নি। এখানে ডিজাইন অনুসরণ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি সরকার এবং ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে ১৯৮৩-৮৪ সালে এ্যাকশন রিচার্স হিসাবে শুরু হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনগোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মৌলিক সেবার সুযোগ বৃদ্ধিকরণ, মা ও শিশুদের জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এসব সেবা প্রদানের জন্য মাঠপর্যায়ে প্রতিষ্ঠান পাড়াকেন্দ্রগুলি। ২০১৯-২০২১ মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রামে টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের মাধ্যমে কুরুকপাতা ইউনিয়নে পাড়াকেন্দ্রগুলি নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কিন্তু এ উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে সঠিক তদারকির অভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের এ মহতি প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে।
এ ব্যাপারে কুরুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ¤্রাে জানান, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আলীকদম উপজেলা প্রকল্প অফিস থেকে আমার ইউনিয়নে পাড়াকেন্দ্র নির্মাণে আমার কোন মতামত নেওয়া হয়নি। কত টাকা বরাদ্দে পাড়াকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে এ ধরণের তথ্যও সংশ্লিষ্ট গোপন রাখেন। বেশ কয়েকটি পাড়াকেন্দ্র নির্মান করে শ্রমিক মজুরি পর্যন্ত তারা পরিশোধ করেনি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প পরিচালক (ইউপিএম) শফিকুর রহমান বলেন, কুরুকপাতা ইউনিয়নে কয়েকটি পাড়া কেন্দ্র নির্মানে অনিয়ম বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাড়া কেন্দ্র নির্মাণকালে এপিএম আশীষ চাকমা অনিয়মে জড়িত ছিলেন তা জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোন ধরণের লেখালেখি করলে মন্ত্রী মহোদয় রাগ করবেন, তাই লেখালেখি না করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।