মেহেদী ইমাম
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, মহিলা পরিষদ ও ছাত্র পরিষদের নানিয়ারচর উপজেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকালে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ছায়ামঞ্চে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমান মজিব। এতে সভাপতিত্ব করেন, পরিষদের রাঙামাটি জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান হাওলাদার।
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মোঃ আলমগীর কবির, অ্যাড. পারভেজ তালুকদার, অধ্যক্ষ আবু তাহের, রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোলায়মান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর জামান ডালিম, এস এম. মাসুম রানা, আসমা মল্লিক, মোরসেদা আক্তার, মোঃ শাহাজালাল, রাঙামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক লাভলী আক্তারসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখা ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এসময় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন (জেএসএস, ইউপিডিএফ) সহ তাদের অঙ্গ সংগঠন প্রতিনিয়ত নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। গুম, হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ বর্বরতম সব ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালীদের উপর। এসব বর্বরতায় এবং অত্যাচারে বাঙ্গালীরা হারাচ্ছে তাদের ভিটেমাটি, এমনকি তাজা প্রাণও হারাচ্ছে অনেকেই। ১৯৯৭ সালের চুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এসব অত্যাচার চলে আসছে। আমাদের বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও পত্রপত্রিকায় যেভাবে উপজাতীয়দের অনগ্রসর, পশ্চাৎপদ ও অসহায় চিহ্নিত করে একচেটিয়া শুধুমাত্র উপজাতিদের জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। যদিও তারা বর্তমানে ততটা পশ্চাৎপদ নয়। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ত্বরা শুধুমাত্র উপজাতিদের অধিকার, পশ্চাৎপদতা, অসহায়ত্বতা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করছে যে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা অনগ্রসর। কিন্তু তার বিপরীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম দুর্গম পাহাড়ী এলাকাগুলোতে যে সব বাঙালী পরিবার উপজাতীদের চেয়ে অনেক বেশি অনগ্রসর, পশ্চাৎপদ ও বৈষম্যের শিকার তা নিয়ে কারো গবেষণা নেই, নেই কোন রিপোর্ট।
বক্তাগণ আরো বলেন, বাস্তবিকভাবে দেখা যায় উপজাতীয়রা বর্তমানে মোটেও পশ্চাৎপদ নয়। প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায় তারা বাংলাদেশের অন্যসব জেলার মানুষের চেয়ে অনেক উন্নত জীবন যাপন করছে। শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসায়-বানিজ্যে সর্বক্ষেত্রে তারা বাঙ্গালীর চেয়ে বহুগুনে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত হাজার হাজার উপজাতী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, সেনা অফিসার, প্রশাসনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যাংকার, পুলিশ কর্মকর্তা, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিদেশী সংস্থার কর্মকর্তা। বিপরীত দিকে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালীরা হাজার থাক শতের কোটাও পার হতে পারেনি- যদিও বাঙালীরা সে অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক এবং উপজাতিদের তুলনায় দক্ষ। অগ্রাধিকারের নামে একচেটিয়া উপজাতীয় অদক্ষ যুবক নিয়োগের ফলে বঞ্চিত হচ্ছে বাঙালী শিক্ষিত যুবকেরা। ১৯৭৬ সালের পর থেকে অস্ত্রের মুখে, রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করার মাধ্যমে যে কোন প্রতিষ্ঠানে একচেটিয়া পাহাড়ি যুবকদের নিয়োগ দিতে বাধ্য করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনিবন্ধিত সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জে.এস.এস), (ইউপিডিএফ) ও তার অঙ্গ সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে চাকুরীরত পার্বত্য বাঙালী কর্মকর্তা কর্মচারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একদিকে সরকারের তরফ থেকে দেয়া উপজাতি অগ্রাধিকার কোঠা, অন্যদিকে আঞ্চলিক পরিষদের চাপ, প্রয়োজনে তাদের অস্ত্রের ব্যবহারে চলছে প্রতিনিয়ত সুবিধা আদায়ের কৌশল।
সম্মেলনে নানিয়ারচর উপজেলা কমিটিতে মোঃ আব্দুল মালেক কে সভাপতি, মোঃ আব্দুল জলিল খান কে সাধারণ-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মোঃ মিজানুর রহমান কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মহিলা পরিষদ উপজেলা কমিটির সভাপতি বিলকিস বেগম ও নাসিমা বেগমকে সাধারন সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও মেহরাজ হোসেন কে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের সভাপতি ও মিজানুর রহমান কে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।