বান্দরবানে র‍্যাবের অভিযানে ১৭জঙ্গিসহ আটক ২০ ॥ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার

140

॥ নুরুল কবির-বান্দরবান ॥

থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নের ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি গোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ১৭ জন সদস্য ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, উগ্রবাদী বাই, কন্টেন্ট, লিফলেট, অস্ত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে রক্ষিত নগদ ৭ লাখ টাকাসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার হয়েছে।

বুধবার সকালে মেঘলাস্থল র‌্যাব কার্যালয়ের সামনে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উপস্থাপন করা হয়। পরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন প্রেস ব্রিফিং করেন।

তিনি বলেন, গত ২০ অক্টোবর রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এলাকায় অভিযানে পহাাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এর ৩ সদস্য ও জঙ্গি সংগঠনের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর সংগঠনের বাকি সদস্যরা রামজুদান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন স্থানে আতœগোপনে থাকে। পরবর্তীতে র‌্যাবের অভিযানে জঙ্গিরা স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। র‌্যাবের অভিযানও অব্যাহত থাকে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, অভিযানে ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে জঙ্গিদের একটি দল বান্দরবানে থানচি লোয়াং মুয়াল পাড়া হয়ে রেমাক্রি ব্রিজ এলাকার দিকে অগ্রসর হচেছ। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭ থানচি রেমাক্রি ব্রিজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার ভোরে জঙ্গি ও পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা (কেএনএফ)র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র‌্যাবের উপর গুলিবর্ষণ করে। একপর্যায়ে জঙ্গি ও কেএনএফের সঙ্গে র‌্যাবের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোরে জঙ্গি ও কেএনএফের সঙ্গে গোলাগুলিতে র‌্যাবের ৮ জন সদস্য আহত হন। ঘটনার দিন বিকেলে থানচি উপজেলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন র‌্যাবের ডিজি এম খুরশীদ হোসেন। ওই সময় র‌্যাবের ডিজি সাংবাদিকদের কাছে৫ জন জঙ্গি গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈনসহ র‌্যাবের আরো কয়েকজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, যে মুহুর্তে র‌্যাবের ডিজি সাংবাদিকদের কাছে তথ্য উপস্থাপন করছিলেন ওই সময়ও জঙ্গি ও কেএনএফের সঙ্গে র‌্যাবের থেমে থেমে গোলাগুলি চলছিল। সন্ধ্যার দিকে জঙ্গিদের ১২ জন জঙ্গি ও ৩ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, উগ্রবাদী বই ও নগদ ৭ লাখ টাকাসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে।

জানা গেছে, থানচি সদর উপজেলার যে রেমাক্রি ব্রিজ এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে তা সদর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে। পাশর্^বর্তী রুমা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়। দুর্গম হওয়াতে রেমাক্রি এলাকায় নিরাপদে ভেবে অবস্থান নেয় জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যরা। মঙ্গলবার থানচি রেমাক্রি ব্রিজ এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা হলো, মো: আস সামী রহমান ওরফে সাদ (১৯), মো: সোহেল মোল্লা ওরফে সাইফুল্লাহ (২২), মো: আল আমিন ফকির ওরফে মোস্তাক (১৯), মো; জহিরুল ইসলাম ওরফে ওমর ফারুক (২৭), মো: মিরাজ শিকদার ওরফে আশরাফ হোসেন ওরফে দোলন (২৬), রিয়াজ শেখ ওরফে জায়েদ (২৪), মো: ওবায়দুল্লাহ ওরফে ওবায়দুল ওরফে সাকিব ওরফে শান্ত (২০), জুয়েল মাহমুদ ওরফে মাহমুদ (২৭), মো: ইলিয়াস রহমান ওরফে তানজিল ওরফে সোহেল (৩২), মো: হাবিবুর রহমান ওরফে মোড়া (২৩), মো: সাখাওয়াত হোসেইন ওরফে মাবরুর (২১), মো: আব্দুস সালাম রাকি ওরফে রাসেল (২৮), যোবায়ের আহম্মেদ ওরফে আইমান ওরফে ওমর (২৯), মো: শামীম হোসেন ওরফে আবু হুরাইরা ওরফে রাফি (২৬), তাওয়াবুর রহমান সোহান ওরফে মিন্ট ওরফে জাকির আলম (২০), মোহাম্মদ মাহমুদ ডাকুয়া ওরফে (২০), মোহাম্মদ আবু হুরাইরা ওরফে মিরাজ (২২)। গ্রেফতারকৃত কেএনএফ সদস্যরা হলো, লাল মোল সিয়াম বম, ফ্লাগ ক্রস ও মালসম পাংকুয়া।

এসময় তিনি পার্বত্য এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া’র ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্যদের নিমূল না করা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে বলেও সাংবাদিকদের জানান। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গোয়ান্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মশিউর রহমান, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহাবুব আলম এবং সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।