বছর ঘুরে ফিরে এলো সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রামাদান

114

॥ আনোয়ার আল হক ॥

আহলান সাহলান মাহে রামাদান। বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবার এলো রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমাদান। আজ মাহে রমাদানের তৃতীয় দিন; এই মাসকে বলা হয় সিয়াম সাধনার মাস; পক্ষান্তরে এই মাসকে সেরা ধর্মগ্রন্থ পবিত্র আল-কুরআন নাযিলের মাসও বলা হয়। মাহে রমযান মুসলিম উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। প্রতি বছর এই মাস আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় আত্মশুদ্ধি, আলাহর নৈকট্য লাভ, রহমত ও বরকত লাভের অপার সওগাত নিয়ে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, রোজা পালনে আলাহর প্রতি যে ভয় ও সম্মান প্রদর্শন করা হয়, সে জন্য বান্দাকে তিনি নিজ হাতে পুরস্কৃত করবেন। হাদিস শরীফে রয়েছে, রোজাদার ব্যক্তিদের বেহেশতে প্রবেশের জন্য ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা সংরক্ষিত থাকবে।

মানব জাতিকে সংযমী চরিত্রের অধিকারী ও পুত পবিত্র তথা সংশোধন করার জন্য আল্ল¬াহ তায়ালা যে কয়টি মৌলিক ইবাদতের ব্যবস্থা করেছেন, রমজান মাসের রোজা তার মধ্যে অন্যতম। বছরে একবার এভাবে একমাস ব্যপী রোজা পালন বা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ যাতে আগামী দিনগুলোতে আল্ল-াহর ভয়ে ভীত; তথা তাক্কওয়া সম্পন্ন, সংযমী, দায়িত্ববোধ ও সময়ানুবর্তিতায় পরিপূর্ণ এবং আল¬াহর হুকুম-আহকাম, আদেশ-নিষেধ পালনের মধ্য দিয়ে তার জীবনকে পরিচালনা করতে পারে’ মহান আল্ল-াহ সে জন্যই বছরে একবার মানুষের জন্য সিয়াম সাধনার ব্যবস্থা করেছেন। তাই এ মাসকে কোরআন ও হাদীসের অসংখ্য বর্ণনায় তাকওয়া অর্জন ও আত্মশুদ্ধির মাস বলা হয়েছে।

রমযান মাস পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস, ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাস, বিজয়ের মাস। মুসলমানের দ্বীন ও দুনিয়ার সমৃদ্ধি, পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উন্নতি, দৈহিক ও মানবিক শ্রেষ্ঠত্ব আর গৌরব ও মর্যাদার অবিস্মরণীয় স্মৃতি বয়ে নিয়ে আসে মাহে রমযান। উন্নত চরিত্র অর্জনের পক্ষে অন্তরায় পাশবিক বাসনার প্রাবল্যকে পরাভূত করে পাশবিক শক্তিকে আয়ত্তাধীন করা হচ্ছে সিয়ামের তাৎপর্য। ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে সর্বত্র আলাহর দীনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় যাবতীয় প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার জন্য যে মনমানসিকতার প্রয়োজন, সিয়াম সাধনার দ্বারাই তা অর্জিত হয়। মানবতার দিশারী রাসূলুলাহ (সা.) ও তার সাহাবারা এ মহান মাসে লড়াই করেছিলেন বাতিলের বিরুদ্ধে, অন্যায়, অসত্য, জুলুম ও শোষণের বিরুদ্ধে এবং মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্ব খতম করার মহান লক্ষ্যে।

সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মানব জাতিকে মহান আলাহ তায়ালার রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের আহবান জানায় এ মাসে। এ মাসের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার জন্য সর্বস্তরের মুসলমানকে এগিয়ে আসতে হবে। রমযানের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রশাসনকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য নাগালের ভিতর রাখতে হবে। গরীব, অসহায় ও মেহনতি মানুষ যেন অর্ধাহারে ও অনাহারে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শ্রমিকদের শ্রম কমিয়ে দিয়ে পুরাপুরি মজুরি প্রদান করা সকলের কর্তব্য। পবিত্র রমজান উপলক্ষে সকলকে দ্বন্দ¡-কলহ, হিংসা-বিদ্বেষ, পরনিন্দা ও চোগলখোরী ছেড়ে দিয়ে অত্মসংযম অর্জন করতে হবে। এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল, কুরআন হাদিস, ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন এবং রমযানের পবিত্রতা রক্ষা করে যাবতীয় বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা থেকে সমাজকে রক্ষার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে।