॥ নুরুল কবির ॥
দেশে প্রথম বারের মতো কলা গাছের তন্তু থেকে শাড়ি তৈরি হলো বান্দরবানে।‘কলাবতি’ নাম দেয়া এই শাড়ি জামদানিকে টেক্কা দিবে বলে মনে করছে উদ্যোক্তরা। পাহাড়ের নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। সেই প্রকল্পের আওতায় পিছিয়ে পড়া নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে েিয়াগ করা হয় মৌলভীবাজারের মনিপুরী প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবীকে। তার তত্ত্বাবধানে ১৫ দিনের প্রচেষ্টায় কলাগাছের তন্তু বা আঁশ থেকে সুতা তৈরি করে সেই সুতা দিয়ে দেশে প্রথম বারের মত শাড়ি তৈরি করে তাগ লাগিয়ে দিয়েছে পাহাড়ি নারীরা। নতুন উদ্ভাবিত এই শাড়ির নাম দেয়া হয়ে রাধাবতী ও কলাগাছের সাথে মিল রেখে ‘কলাবতী সুতি শাড়ি’।
সরেজমিনে জানা গেছে, শহরের কালাঘাটা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়–য়ারটেক এলাকায় জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগে পরিচালিত পাহাড়ি নারীদের দক্ষ ও স্বাবলম্বী করার পাইলট প্রকল্প চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে স্থানীয় সাড়ে ৪ শত নারীকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন জেলা থেকে দক্ষ প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরির কাজে লাগানো হচ্ছে। কাজের বিনিময়ে প্রশিক্ষণার্থীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভাতা প্রদান করা হয়। এতে বেকার নারীরা প্রশিক্ষণ নিতে যেমন উৎসাহ বোধ করছেন, তেমনি তাদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশিক্ষণরত হস্তশিল্প শিক্ষার্থী উসিং ওঞাই, মিথুই প্রু ও সাবিনা ইয়াসমিন জানান, আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি এই হস্তশিল্পের কাজ শিখছি। এতে করে আমরা একদিকে হাতের কাজ শিখতে পারছি। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি। এখন আমরা হস্তশিল্পের অনেকগুলো আইটেম তৈরি করতে পারি।
হস্তশিল্প প্রশিক্ষক মনিপুরী রাধাবতী দেবী বলেন, কলা গাছের তন্তু বা আঁশ থেকে সুতা ও সুতা থেকে দীর্ঘ ১৫ দিনের প্রচেষ্টায় একটি আকর্ষণীয় শাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। আমি জেলা প্রশাসক ম্যাডামকে কথা দিয়েছিলাম শাড়িটি তৈরি করব; রাত-দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করতে পেরে আমরা পরিতৃপ্ত।
মনিপুরী রাধাবতী দেবী আরো বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক রকম সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি হয়। কিন্তু কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি দেশে এ প্রথম তৈরি হয়েছে। এ আকর্ষণীয় শাড়িটি ১ কেজি কলাগাছের সুতা দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে তৈরি হয়েছে। তবে আগামীতে কম খরচে আরো উন্নতমানের শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
পাইলট প্রকল্পে সংযুক্ত শাড়ি তৈরির সার্বিক সহযোগী ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাই সাই উ নিনি জানান, জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির দুরদর্শী চিন্তার ফসল এই কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি ১৩ হাত লম্বা দৃষ্টিনন্দন পরিবেশবান্ধব শাড়ি। এ শাড়ি তৈরির মাধ্যমে পাহাড়ের নারীরা স্বাবলম্বী হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, বান্দরবানের নারীরা পাইলট প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কলা গাছের সুতা দিয়ে কলম দানি, ফাইল ফোল্ডার, টেবিল মেট, পাপোস, শোপিস, কানের দুলসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প তৈরি করছে। আরো বিভিন্ন ধরনের সৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করছে নারীরা। আর এগুলো ইতিমধ্যে ভালো দামে বিক্রিও হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা কলাগাছের সুতা থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন শাড়ি তৈরি করতে পেরেছি। এটি দেখতে যেমন সুন্দর ও তেমন আকর্ষণীয়। এই শাড়িটি দেশে প্রথমবারের মতো কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি হয়েছে। তিনি আগামীতে জেলার ৭টি উপজেলার হস্তশিল্পে আগ্রহী নারীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে বলে জানান।