॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বাজার ফান্ডের জায়গায় দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদান এবং জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে নাগরিক পরিষদ। রোববার (১ অক্টোবর) সকাল ১০টায় জেলা শহরের জাফরান রেস্টুরেন্ট এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে বাজার ফান্ড প্রশাসক কর্তৃক বাজার ফান্ডের জায়গায় ব্যাংক ঋণের অনুমতি নিয়ে দীর্ঘদিন লোন পেয়ে আসছেন। পার্বত্য চুক্তির পরও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিলো। কিন্তু ২০১৯ সনের ডিসেম্বর মাসে অলিখিত ভাবে বাজার ফান্ডের জায়গায় দোকান পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্টান নির্মাণে ব্যাংক ঋণ বন্ধ করে দেয় বর্তমান সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, জেলা পরিষদ আইন, বাজারফান্ড আইন ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি এসবের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এবং আইনগুলো সংশোধন বা বাতিল না হওয়ায় বিভিন্ন সময় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় একেক সময়ে বিভিন্ন আইনের ভিন্নতা প্রয়োগ করেন আইন সরকারি সংস্থাগুলো। আইনী মারপ্যাচে বন্ধ রয়েছে বাজারফান্ডের আওতাধীন প্লট বা জায়গার বদৌলতে ঋণ। আর এতে ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। বাজার ফান্ডের এই জটিলতায় ১৭টি তফসিলি ব্যাংক নতুন ঋণ যেমন দিচ্ছেনা, তেমনি পুরাতন ঋণ নবায়নের কার্যক্রমও স্থগিত রয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে অনেক ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে নতুন উদ্যোক্তা তৈরী করা সম্ভব হচ্ছেনা। ব্যাংকিং কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়ে প্রভাব পড়ছে আত্মসামাজিক উন্নয়নে। এহেন অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান হয়ে যাচ্ছে নিম্নমুখী।
দীর্ঘ বছর যাবৎ জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার ধারাবাহিকতা চলে আসলেও হঠাৎ করে ঠুনকো অজুহাতে ঋণ কার্যক্রম বন্ধ রাখাটা যেমন অযৌক্তিক তেমনি অমানবিকও। পাশাপাশি এর মাধ্যমে সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্রও বটে। বাজারফান্ডের প্লট বা জায়গায় ব্যাংক ঋণ না পাওয়ার কারণে অত্রাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা
নেমে এসেছে। এতে করে আগামী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাধাগ্রস্থ হবে। কারণ স্মার্ট জনগণ তৈরী না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবেনা।
সংবাদ সম্মেলনে কাজী মোঃ মজিবর রহমান আরো বলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বাজারফান্ড এলাকায় ৮০% বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী বসবাস করলেও অবৈধ আইনী
জটিলতার কারণে মৌজা এলাকায় সাধারণ মানুষ জমির মালিকানা পাচ্ছেনা। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ মনে করে বাঙ্গালীদের আর্থসামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে না দেয়ার জন্য বাজারফান্ড এলাকায় ব্যাংক ঋণ বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে দাবী করা হয়।
অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে চালু হওয়া প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হলেও অদ্যাবধি বান্দরবানে জেলা মডেল মসজিদের জন্য জায়গা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
প্রকল্পের কাজ চালু হওয়ার ৫ বছর গত হলেও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় প্রশাসনের গড়িমসির কারণে আজও নির্ধারণ হয়নি জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জায়গা। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত বিশেষ প্রকল্প বান্দরবান জেলা মডেল মসজিদের বরাদ্দ ও টেন্ডার হয়ে কার্যাদেশ প্রদান সহ ১৯ কোটি টাকা ফেরত চলে যাবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির যুগ্ন সম্পাদক মোঃ কাজী ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মোঃ শাহ জালাল রানা, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পদক মোঃ কামাল হোসেন, সামসুল হক সামু, মোঃ এরশাদ চৌধুরী প্রমূখ।