পার্বত্য অঞ্চলের ৩৮ হাজার একর ফসলী জমিতে তামাক চাষ: প্রশাসনের নজরদারি নেই

638

khagrachari-photo-1

নুরুল আলম- ২৭ নভেম্বার ২০১৬, খাগড়াছড়ি থেকে : তামাক চাষের উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ২৩ হাজার তামাক চাষি সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহফসলি জমিতে তামাক চাষ শুরু করেছে। তামাক কোম্পানীগুলো পাবর্ত্য অঞ্চলের অভাবী চাষিদেরকে অগ্রীম ঋন প্রদান করে তাদের ফসলি জমিতে তামাক চাষ করতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। লামা বন বিভাগের আওতাধীন বমু ও আলীকদমের তৈন রেঞ্জের সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মাঝে অবৈধভাবে তামাক চাষ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বন বিভাগের লোক জন।

তামাক চাষের জন্য কোম্পানীগুলো স্থানীয় সোনালী ও জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে কোন কাগজ-পত্র ছাড়াই চাষিদের একর প্রতি ১৫/২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে সহযোগিতা করেন। অথচ ইরি, বোরো, আমন অথবা রবিশস্য উৎপাদনে ব্যাংক থেকে ৫/৬ হাজার টাকার বেশী ঋণ পাওয়া যায়না। আর এই সুযোগে লামা, আলীকদম, নাইক্ষংছড়ি উপজেলা ও লামার পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারের চকরিয়ার রামু বিলছড়ি এলাকার ২৩ হাজারের অধিক তামাক চাষি তামাক চাষ করছেন। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা, বাঘাইরহাট, নানিয়ারচর, কাউখালীসহ আরো অনেক স্থানে তামাক চাষ ছড়িয়ে পরছে। সরকারকারের স্থানীয় প্রশাসননের সহযোগিতা না তামাক চাষের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছেনা বলে বিভিাগীয় বন কর্মকর্তা অসহায়ত্ত্ব প্রকাশ করেন।

এদিকে তামাক সংরক্ষনের জন্য চাষীরা বছরের পর বছর কাঠ পুড়ে বন উজার করছে। তামাক কোম্পানীগুলোর স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে লামা, আলীকদম, নাইক্ষংছড়ি এবং পার্শ্ববর্তী বমু বিলছড়ি এলাকার প্রায় ৩৮ হাজার একর ফসলী জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ করার সকল প্রস্তুতি ইতিমোধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই সকল তামাক প্রক্রিয়া জাত করণের কাজে নির্মাণ করা হয় প্রায় ১৬ হাজার তামাক চুল্লি। তামাক কোম্পানী গুলো তামাক চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাষীদেরকে বীজ, সার, কীটনাশক, পাওয়ার পাম্প ও প্রয়োজনীয় অর্থসহ সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করলেও তামাক প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য তামাক চুল্লির জ্বালানী সরবরাহ করেন না।

স্থানীয় চাষি আলী আশ্রাফ জানান, এক বছর ঋনের বিনিময়ে তামাক দিতে না পরলে পরের বছর তামাক চাষ করে তামাক দিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয় তাদের। বর্তমানে লামা, আলীকদম ও নাইক্ষংছড়ি এবং চকরিয়া বমুবিলছড়ি এলাকায় ১০টি তামাক  কোম্পানী  ব্যবসা করে যাচ্ছে।

এর মধ্যে  ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানী, আবুল খায়ের ট্যোবাকো, নাসির ট্যোবকো, ঢাকা ট্যোবাকো, রাঙ্গুনিয়া সমিতি ও নিউ এজ ট্যোবাকো কোম্পানীসহ আরও কয়েকটি কোম্পনী রয়েছে।

জানা গেছে, লামা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৯৮৩ সালে বিৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর সহযোগীতায় লামার বৈল্লারচর এলাকায় পরিক্ষা মূলক অল্প পরিমান জমিতে তামাক চাষ শুরু হয়। এর পরের বছরই তা ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পাশ্ববর্তি আলীকদম, নাইক্ষংছড়ি উপজেলা ও কক্সবাজারের চকরিয়ার বিস্তিন্ন এলাকায়।

পোস্ট করেন, শামীমুল আহসান- ঢাকা বুরো প্রধান।