৬৮ দিন পর চালু হলো স্বপ্নের বেইলী সেতু রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক সকল যান চলাচলে উন্মুক্ত

662

॥ আলমগীর মানিক, দীপ্ত হান্নান, মঈন উদ্দীন বাপ্পী ॥

রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ৬৮ দিনের মাথায় সোমবার সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া সড়কের পাশেই নবনির্মিত বেইলি সেতুটি চালুর মাধ্যমে সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বাধাহীন করেছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকাল ১১ টায় বেইলী ব্রীজ চালুর সময় রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে রাঙামাটি থেকে ঢাকায় সরাসরি ভারি যান চলাচলের জন্য শুক্রবার (২৫ আগষ্ট) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেন এ সময় বলেন, সড়ক কর্মীরা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে এই ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষে করেছে। তিনি বলেন, আমরা পরিতৃপ্ত যে, শালবাগান এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া সড়কে নির্মাণ করা বেইলী ব্রীজটি ঈদের আগেই আমরা ভারী যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পেরেছি। এখন থেকে সকল ধরনের পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তিনি জানান, জটিল মৃত্তিকার উপর ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের কঠিন এই বেইলী ব্রীজের নির্মাণ কাজ মাত্র এক মাস দশ দিনের মাথায় সমাপ্ত করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে ব্যয় হয়েছে ২কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এদিকে রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়কে ভারি যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মাঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, সোমবার সকালে সড়কটি খুলে দেওয়ার পর থেকেই আমাদের সার্ভিসগুলো চলছে। তবে ঢাকার বাস সার্ভিসগুলো আপাতত চলাচল না করার জন্য বলেছে সড়ক বিভাগ।

চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের বাস চালক কুদ্দুস বলেন, ব্রীজটি চালু হওয়ার আমরা খুবই খুশি। অনেকদিন পর আমরা চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সরাসরি বাস চালাতে পারছি। আমাদের একটি দাবী থাকবে সড়কের অনেক জায়গায় বেশকিছু ভাঙ্গা রয়েছে সেগুলো যদি ঠিক করা হয় তাহলে আমরা নিরাপদে গাড়ী চালাতে পারবে। অপরদিকে, বাস যাত্রী আমেনা বেগম বলেন, এতদিন আমাদের চট্টগ্রাম-রাঙামাটি যাওয়া আসা করতে খুবই কষ্ট করতে হতো এখন পুরোপুরি চালু হওয়ায় আমাদের কষ্ট লাঘব হলো। সিএনজি যাত্রী সঞ্জয় জানান, আগে আমাদের রাঙামাটি আসতে দুইবার গাড়ী পরিবর্তন করে আসতে হতো এখন সরাসরি যাতায়াত করতে পারছি।

ঠিকাদারা শফিউল আযম বলেন, পাহাড় ধসের ফলে বিগত দুইমাস রাঙামাটিবাসী যে কষ্ট করে যাতায়াত করেছি তার থেকে আমরা মুক্তি পেতে যাচ্ছি। আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বলতে চাই এই ব্রীজের কারনে  আমরা চট্টগ্রাম  ঢাকা থেকে আমাদের মালামাল আনতে পারি নাই। কষ্ট করে আতে গেলেও দ্বিগুন ভাড়া গুনতে হয়েছে। রাঙামাটি পৌর টোল ইজারাদার মো: আবু তৈয়ব বলেন, বিগত দুইমাস ধসে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। অতি দ্রুত সময়ের ধ্যে যে ব্রীজটি চালু করেছে তার জন্য আমি সড়ক বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই।

সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, গত ১৩ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি জেলায় বিভিন্ন সড়কে ১৩৯টি স্থানে ভেঙ্গে গেছে। সেগুলো ইতোমধ্যে জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের জন্য কাজ চলছে। এ জন্য ১৪কোটি ১লাখ টাকা মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে তার বরাদ্দ পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাস্তা বড় করতে হলে পাহাড় কাটতে হবে। সেক্ষেত্রে অনেক কাজ বাকি। আপাতত ভারী যান চালাচলের জন্য এই ব্যবস্থা। ৬৮ দিন বলা হলেও আমরা কিন্তু কাজ শুরু করি ঘটনার ২-৩ সপ্তাহ পর। তার ওপর মাঝে মাঝে লাগাতার বৃষ্টির জন্য কাজ করতে পারিনি।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেইলী সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু মুছা জানান, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা বেইলী ব্রীজটি নির্মান করেছি। সেতুটি খুবই মজবুতভাবে করা হয়েছে যাতে করে সকল  প্রকার  যানবাহন চলাচল করতে পারে। তিনি জানান, শুক্রবার (২৫আগষ্ট) থেকে রাঙামাটি-ঢাকা-রাঙামাটি পরিবহন সার্ভিসগুলো চলতে দেয়া হবে। এছাড়া ঈদের দুয়েক দিন আগে কাঠের গাড়ি, মালবাহী ট্রাক  চলাচল করতে পারবে বলে তিনি জানান। সড়কটি সম্পুর্ণ নিরাপদ এবং বৃষ্টিতে তেমন ক্ষতি হবে না বলে তিনি যোগ করেন।

অপরদিকে, রাঙামাটি ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নীতি বিকাশ দত্ত বলেন, আজকে থেকে এখানে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য গাড়ী চলাচল করবে। আমরা সকাল ৮ থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গাড়ী চলাচল নিয়ন্ত্রন করবো।

রাঙামাটি সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ১৩ জুন পাহাড় ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরমধ্যে সড়কের সদর উপজেলার সাপছড়ির শালবনে ১০০ মিটার রাস্তা ধসে ১০০ ফুট খাদে তলিয়ে বিলীন হয়ে যায়। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সড়কটির যোগাযোগ। বিধ্বস্ত অংশে ভরাট ও মেরামত করে ঘটনার ৮ দিন পর ২১ জুন সড়ক দিয়ে হালকা যান চলাচল শুরু হয়।

সড়ক বিভাগ জানায়, ভাঙা সড়কগুলো সরেজমিনে যাচাই করে চলতি বছরের ১ জুলাই প্রকল্প প্রস্তবনা তৈরী করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রস্তবনাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তবনায় মোট ১১টি প্যাকেজের আওতায় ১১৪টি পৃথক প্রাক্কলন প্রস্তুত করা  হয়। প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ১৪ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা ধরা  হয়েছে।

রাঙামাটি সড়ক বিভাগের আওতায় বর্তমানে ২৪২ কিলোমিটার দূরত্বের সাতটি সড়ক রয়েছে। পাহাড় ধসে এইসব সড়কের ১৪৫টি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩৭টি স্থানে সড়ক ধসে গেছে। রাঙামাটি থেকে সাপছড়ি পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তায় ৪০টি স্থানে সড়কের ওপর পাশের পাহাড় ভেঙে পড়েছে ২২টি স্থানে প্রধান সড়কটিতে বড় বড় ফাটল রয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

চলতি বছরের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভারী বর্ষনের ফলে ভয়াবহ পাহাড় ধসে রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়কে যানবাহন চলাচল সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড় ধসের ঘটনায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং  সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছে।