অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় টেলিটক সিম ব্যবহারের অভিযোগ

401

press photo  vioipe

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা- ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : অনিবন্ধিত টেলিটক সিম ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহার করে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবায়ীরা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে কোটি কোটি টাকার রজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। আজ সকাল ১১টায় বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রহক এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেনে এ অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেনে জনানো হয়, ৩১ শে মে ২০১৬ইং তারিখ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর অন্যান্য অপারেটরদের অনিবন্ধিত সিম বন্ধ হলেও টেলিটকের মোট ৪৫ লক্ষ সিমের মধ্যে আজ অবধি ২২ লক্ষ সিম নিবন্ধিত হয়নি। আর এ সকল অনিবন্ধিত টেলিটক সিম ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভিওআইপিতে কোন সিম ব্যবহার হচ্ছে কি না তা জানার জন্য বিটিআরসি দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে। একটি হচ্ছে এসবিডি অপরটি হচ্ছে সেলফ রেগুলেশন পদ্ধতি (এসআরপি)। দুটি পদ্ধতিতে দৈনিক কতগুলো সিম ভিওআইপিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সে বিষয়ে বিটিআরসি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। আর এ পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলেই টেলিটকের এ অবৈধ সিম ব্যবহারেরচিত্র উঠে এসেছে। বিদেশ থেকে অবৈধভাবে যে কল আসে তা ভিওআইপির মাধ্যমে আসে। বৈধভাবে একটি কল আসার নিয়ম হলো প্রথমে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটর সুইচের (আইওএস) মাধ্যমে আইসিএক্স অপারেটরের কাছে যায়, তারপর অপারেটর হয়ে তা গ্রাহকের কাছে আসে। বৈধ পথে কল আনার ক্ষেত্রে খরচ পড়ে ১.৫ সেন্ট বা বাংলায় ১ টাকা ২০ পয়সা (বর্তমানে ২ সেন্ট)। এই অর্থের ৪০% সরকার, ১৭.৫% আইসিএক্স ২২.৫% মোবাইল অপারেটর আর বাকি ২০% আইজিডব্লিও কোম্পানি পেয়ে থাকে। অবৈধভাবে আসা কলটিকে মুঠোফোন অপারেটর এর মাধ্যমে লোকাল কল হিসেবে দেখানো হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে যেহেতু কল আসে তাই এর অর্থ ভাগাভাগি করার কোন প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিন গড়ে বিদেশ থেকে ভিওআইপি এর মাধ্যমে টেলিটক সিমে কল আসে ৮ কোটি মিনিট। যার শুধু উৎপাদন খরচ হিসাব করলে দাড়ায় ৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। মাসিক দাড়ায় ২ শত ৮৮ কোটি টাকা যা একটি বাৎসরিক অর্থ বছরের হিসাব করলে ৩ হাজার ৪ শত ৫৬ কোটি টাকা। টেলিটক সিম ব্যবহার করে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে আয় হলেও টেলিটক ও বিটিসিএল এর কাছে বিটিআরসির পাওনা ৩২০০ কোটি টাকা। যা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে টেলিটক। আমাদের প্রশ্ন এ বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ আসলে যায় কার কাছে?

২২ শে আগষ্ট ২০১৬, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনর হিসাব মতে দেখা যায় ২১ শে আগষ্ট পর্যন্ত টেলিটকের অবৈধকাজে ব্যবহার করা সিমের সংখ্যা ৪১৮৪। ৮ দিনে টেলিটকের ১৫০০০ সিমের বিপরীতে গ্রামীণ ফোনের ২০টি, বাংলালিংকের ৭টি, রবির ৭৫টি, এয়ারটেল ও র‌্যাংসটেলের ১টি করে সিম ধরা পড়েছে। অবৈধ ভিওআইপি ধরতে বিটিআরসির চালানো দুটি অভিযানে মোট ৯১৩০টি সিম ধরা পড়ে। এর মধ্যে টেলিটকের সিম সংখ্যা ছিল ৬৬৬২, গ্রামীণ ফোনের ১৪০৫টি, এয়ারটেলের ৩৮৭টি, রবির ৩৩৮টি, বাংলালিংকের ১০০টি সিম পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য সিম ব্যবহার করে অবৈধ ভিওআইপি থেকে আয় করা অর্থেরও কোন হদিস নেই। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের অন্যতম কারণ ছিল অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ করা। কিন্তু ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ তো দূরের কথা খোদ সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান টেলিটকের সিমই এ অবৈধ ব্যবসায় বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এ অবৈধ বিপুল পরিমাণ অর্থ থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে। যারা টেলিটকের সিম ব্যবহার করে অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা করে অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছেন তাদেরকে অতি শীঘ্রই শাস্তির আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ। এছাড়া উপস্থিত আছিলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি হারুন অর রশীদ খান, আওয়ামী ন্যাপ ভাসানীর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: ইব্রাহিম, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবি এ্যাড. ইশরাত হাসান, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি কবির চৌধুরী তন্ময়, সংগঠনের মহাসচিব এ্যাড. আবু বক্কর সিদ্দিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী সরদার, মহিলা বিষয়ম সম্পাদক সীমা আক্তার, রাজশাহী বিভাগের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।