আধিপত্য বিস্তারে খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের মধ্যে গোলাগুলিতে সাতজন নিহত: তদন্ত কমিটি গঠন

357

 

স্টাফ রিপোর্টার- ১৮ আগস্ট ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি:  পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর অঞ্চলে উপজাতীয় সশস্ত্র গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক হত্যাকান্ডে এবার খাগড়াছড়ির স্বর্নিভর বাজারে বিবদমান দুই পাহাড়ি গ্রুপের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী বন্দুক যুদ্ধে ৬ জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে। হাসপাতালে নেয়ার পর আরো এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা মিডিয়াকে জানিয়েছে, শনিবার- ১৮ আগস্ট, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বনির্ভর বাজারের বিবদমান দুই পাহাড়ি সংগঠনের মধ্যে অতর্কিতভাবে প্রচন্ড গুলিবিনিময় শুরু হয়। ভারী অস্ত্রের গুলির আওয়াজে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। আতংকে এলাকায় লোকজন দিক-বিদিক পালাতে শরু করে।


একই সময় সন্ত্রাসীরা স্বনির্ভর বাজারে অবস্থিত পুলিশ বক্সে গুলি চালায়। খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারটি লাশ উদ্ধার করে। আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হলে আরো দুইজন মারা যায়।
নিহতরা হচ্ছেন ইউপিডিএফ’র প্রসীত খিসা গ্রুপ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি সভাপতি তপন চাকমা, সহসম্পাদক এল্টন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুবফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা পলাশ চাকমা, বরুন চাকমা, রুপন চাকমা ও মহালছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারি জিতায়ন চাকমা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশংকাজনক ছিল।
এ ঘটনার পর থেকেই খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। খাগড়াছড়ি শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চাঁদাবাজির প্রতিবাদে শিববাড়ি এলাকার পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ইউপিডিএফ সমর্থকরা খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজার এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। সেখানেই কোনো কিছু বোঝার আগেই প্রতিপক্ষ তাদের ওপর গুলি চালান। এক পর্যায়ে তারা ইউপিডিএফ কার্যালয়ে আশ্রয় নিলে সেখানেও গুলি চালায়।

গুলিতে নিহত মহালছড়ি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী জীতায়ন চাকমার স্ত্রী প্রভাতী চাকমা জানান, শনিবার অফিস বন্ধ হওয়ার কারণে সকালে বাজারে নাস্তা করতে যান জীতায়ন। সেখানেই এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
খাগড়াছড়ি হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার পর হাসপাতালে ৬ জনের লাশ এসেছে। আহত অপর তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেহ হাসপাতালে পাঠানো হয়ছে।
ইউপিডিএফ- এ ঘটনার জন্য জনসংহতি সমিতির এমএন লারমা গ্রুপকে দায়ি কর। এ অভিযোগ অস্বীকার করে জনসংহতি সমিতির নেতা সুধাংকর চাকমা বলেছেন, এ ঘটনাটি ইউপিডিএফ’র প্রসিত খিসা গ্রুপের আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে ঘটেছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, বিবদমান দুই পাহাড়ি সংগঠনের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী বন্দুক যুদ্ধে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরবর্তি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ এবং স্থানীয় আইন-সৃংখোলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

সংগঠিত এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার রাতে খাগড়াছড়ির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম এই কমিটি গঠন করেন।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু ইউছুফকে আহ্বায়ক ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামছুল তাবরীজকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- খাগড়াছড়ি সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল আওয়াল, খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নয়নময় ত্রিপুরা এবং খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন মজুমদার।
গঠিত এ কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।