আসছে ডিসেম্বর নাগাদ নিজস্ব ভবনে রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে

449

॥  মঈন উদ্দীন বাপ্পী  ॥

আগামী ডিসেম্বর নাগাদ রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসার আব্দুল মান্নান ও বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি প্রফেসর ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা।

তিন পার্বত্য জেলার মানুষের অনেক আকাক্সক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি অবশেষে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে যাচ্ছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করে ভিসি জানান, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান বিভাগগুলো ছাত্রসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শাহ স্কুলের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরহ হয়ে পড়েছে।

বিষয়টি মঞ্জুরী কমিশন চেয়ারম্যানের গোচরে আনা হলে তিনি অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এই টাকা দিয়েই আপাতত অস্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হবে।

তবে মূল ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। কারণ মূল ক্যম্পাস নির্মাণের জন্য ২২৭ কোটি টাকার ডিপিপি বা মহা পরিকল্পনাটিতে বরাদ্দ বাড়িয়ে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করায় সময় লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি মূল ক্যাম্পাসটি আক্ষরিক অর্থেই দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজে আগ্রহ প্রকাশ করে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান।

শনিবার রাঙামাটি পর্যটন কপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি’ শীর্ষক কর্মশালা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান এই তথ্য জানান।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসার আব্দুল মান্নান এ সময় আরো বলেন, দেশের শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি বলেন বর্তমানে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উন্নয়নে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে স্বাধীনতার পর গোটা দেশের বাজেটের জন্য ওই প্রায় পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, শিক্ষার উন্নয়নের যত কাজে প্রধানমন্ত্রীর কাজে গিয়েছি ততবার তিনি কখনও খালি হাতে ফেরত পাঠায়নি। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে প্রান্তিক এলাকা হিসেবে পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রামে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রফেসার জানান, সরকার আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটাতে রাঙামাটিতে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একদিন পার্বত্যাঞ্চলকে উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ রাখবে।

রাঙামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল গবেষণা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রায়োগিক শিক্ষার সম্প্রসারণ ও সুস্থ নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সম্প্রীতি, শান্তিও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান করার কারিগর হিসেবে শিক্ষকদের শিক্ষার প্রতি আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আহবান জানান তিনি।

রাঙামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার অঞ্জন কুমার চাকমার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসার ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উপ-সচিব শাহীন সিরাজ, মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব জাকিয়া পারভিন প্রমুখ।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসার আব্দুল মান্নান আরও বলেন, রাঙামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মানন্নোয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে একদিন। কারণ সরকার পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা যাতে ঘরে বসে উচ্চশিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে তার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। কিন্তু  রাঙামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকার কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কিছু দূর্ভোগে পরতে হয়েছে। তবে এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে।

রাঙামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মানের কাজ সম্পন্ন হলেই শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারবে বলে যোগ করেন তিনি।

দিনব্যাপী বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি শীর্ষক এ কর্মশালায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মকর্তার অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে চালু হওয়া রাঙামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি ব্যাচে বর্তমানে ২৬৬জন শিক্ষার্থী অস্থায়ী ক্যাম্পাসে লেখা-পড়া করছে। ভিসি তার বক্তব্যে জানান, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো ১০০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে ৮ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও ইতোমধ্যে আরো ৯জন নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, যারা সহসাই যোগদান করবেন।