ভূমি সমস্যার নিরসন হলেই পাহাড়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবেঃ ওবায়দুল কাদের

397

আলমগীর মানিক
পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রতিটি শব্দ শেখ হাসিনার সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমি নেত্রীর পক্ষ থেকে বলতে চাই শান্তি চুক্তির প্রতিটি ওয়াদা পূরণ করবে শেখ হাসিনার সরকার। ওবায়দুল কাদের বলেন ভূমির জটিলতা ছাড়া আর সবকিছুই শেখ হাসিনার সরকার পাহাড়ে করেছে। কি নেই আজ রাঙামাটিতে, সবই আছে বলে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ভূমি সমস্যার সমাধান হলেই পাহাড়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আমাদের উপর, শেখ হাসিনার উপর আস্থা রাখুন। হানাহানি-মারামারি, রক্তপাত এই পাহাড়ে আর চাইনা। সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহবান তিনি।

মঙ্গলবার রাঙামাটির জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়াল বক্তব্য প্রদানকালে ওবায়দুল কাদের এমপি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি দলীয় অর্ন্তকোন্দল নিয়ে বলেন, আগামী বছর নির্বাচন। অর্ন্তকলহ থেকে আপনারা নিজেদের বিরত রাখুন। নিজেদের কলহ আপন ঘরে যার শক্রু, তার শত্রুতা করার জন্য বাইরের শত্রুর দরকার নেই। দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করুন, যারা এক সময় একই সাথে পার্টি করেছে। ঘরের কহল নিজেরা বসে সমাধান করুন, আলাপ আলোচনা করুন।

যে কোন অবস্থাতেই আওয়ামী লীগের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্ধগুলো সমাধান করার জন্যে দলীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, পাহাড়ে আপনারা অনেক ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলেছেন। জীবনের অনেক ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের আজ এপর্যন্ত আসতে হয়েছে। এখনো ঝুঁকি আছে। এখনো সংঘাতে রক্তপাত মাঝে মাঝে আমরা দেখতে পাই। এই রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। পাহাড়ী-বাঙ্গালী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ধরে রাখতে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে সেতুমন্ত্রী বলেন, মানুষের হাসি দেখলে বিএনপি নেতাদের মুখে কালো মেঘের ছায়া পড়ে। পদ্মা সেতুসহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন-অর্জনে মানুষ যখন আনন্দিত, তখন বিএনপি নেতাদের বুকে ব্যথা সৃষ্টি হয়। মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা তখন বিষ-জ্বালায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব, ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ, ক্ষমতার মালিক এই দেশের জনগণ। জনগণ শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অর্জনে খুশি। আমরা যদি সবাই জনগণকে খুশি রাখতে পারি ভালো আচরণ করে, তবে আগামী নির্বাচনে আবারও বিজয়ের বন্দরে পৌঁছব। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় ছিল ততবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে, অন্যদিকে বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় ছিল জনগণ তাদের টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।

রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদারের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ওয়াসিকা আয়েশা খান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী প্রমূখ।
সম্মেলনশেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচন নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন সভাপতি প্রার্থী নিখিল কুমার চাকমা। শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদক পদে আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য হাজী কামাল উদ্দিন ও জেলা পরিষদের সদস্য বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৩৮ পেয়ে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক পদে জয়লাভ করেছেন মূছা মাতব্বর। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হাজী কামাল পেয়েছেন ১০২ ভোট।