রাঙামাটির মাদক অফিসের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অশালীন আচরনের অভিযোগ

351

॥ আলমগীর মানিক ॥
রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী এলাকায় স্থানীয় জনতার হাতে আটক হওয়া রাঙামাটি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এসআইকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ। ভেদভেদীর পোষ্ট অফিস কলোনী এলাকায় স্থানীয় এক দোকানে গিয়ে কিশোরী মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা দাবি করলেও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে লোকজন দাবি করেছে যে, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।

শুক্রবার দুপুরে ঘট এই বিষয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভেদভেদীস্থ নতুন পাড়ার পোষ্ট অফিস কলোনী এলাকার জনৈক ব্যক্তির দোকানে তার কিশোরী কন্যা বসে দোকানদারি করছিলো। শুক্রবার দুপুরে উক্ত দোকানে সিভিল পোশাকে রাঙামাটি মাদক নিয়ন্ত্রন কার্যালয়ের এসআই লিটন মল্লিক উপস্থিত হন। এসময় সুযোগ বুঝে উক্ত কিশোরী কন্যার গায়ে হাত দিলে কিশোরীটি তার মাকে ডাক দেয়। এসময় কিশোরীর পিতা-মাতা ভেতর থেকে এসে চিৎকার করলে এলাকাবাসী উক্ত লিটন মল্লিককে আটক করে।

এদিকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাঙামাটি কার্যালয়ে কর্মরত এসআই জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মূলতঃ ওই দোকানে মাদক বিক্রি করা হয় এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে ছদ্মবেশে গিয়েছিলো এসআই লিটন মল্লিক। আমি ও আমার অপর সহকর্মী সিপাহী সোহেল রানা একটু অদূরেই ছিলাম। কিন্তু মাদকের ঘটনা আঁচ করতে পেরে দোকানদার বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্যই ওই ঘটনাটি সাজিয়েছে। রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছুফি উল্লাহ জানিয়েছেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এসময় থানা পুলিশ উক্ত ভিকটিমের পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দিতে বললেও তারা কোনো অভিযোগ দেননি। বিষয়টি আগামী রোববার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মিমাংসা করবে বলে থানা থেকে চলে গেছে।

এদিকে, এর আগে শহরের আসামবস্তি এলাকার স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রকে গাঁজা পাওয়ার অভিযোগে আটক করে মারধরের পর তার পকেটে থাকা ২ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার পরদিন উক্ত যুবকের বড় বোনকে শহরের রাজবাড়ি এলাকায় গিয়ে বিকেল বেলায় দেখা করার জন্য মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রস্তাব দেওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আসামবস্তিস্থ নাজিম রেষ্টুরেন্ট এর কর্ণদার সালমা জানিয়েছেন, গতমাসের ২৩ তারিখে দোকানে এসে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই সবকিছু চেক করতে থাকে কয়েকজন মানুষ। এসময় দোকানের পাশে থাকা আমার ছোট ভাই কলেজ ছাত্র নাজিমকে ধরে বেদড়ক পেঠাতে থাকে। এসময় তার পকেটে এক পুড়িয়া গাঁজা পাওয়া গেছে এমন সব বলে তার পকেটে চেক করার নামে দুই হাজার টাকাও নিয়ে নেন মাদক পরিদর্শক শিবনাথ কুমার সাহা।

পরবর্তীতে আমি বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানানোর চেষ্ঠা করলে টাকাগুলো রেখে আমার ভাইকে ছেড়ে দেয় তারা। এরপরদিন রাঙামাটি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শিবনাথ কুমার সাহা সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের সময় দোকানী সালমা বেগমের মুঠোফোনে কল করে তার সাথে দেখা করতে বলেন। কথোপকথনটি হুবহু:
পরিদর্শক শিবনাথ- হ্যালো,
রিসিভকারী সালমা-হ্যালো কে,

শিবনাথ- হ্যালো ঐ যে কালকে আপনার ভাইরে ধরছিলাম, ভূইলা গেলেন; আপনার ভাইরে ধরলাম গাঁজাসহ কাইলক্যা, সালমা না আপনি?
সালমা- হ্যা বলেন,
শিবনাথ-হ্যা…
সালমা- বলেন না।
শিবনাথ- আমি আপনার ভাইরে ছাড়লাম তো, আপনি পরে যোগাযোগ করবেন না, দেখা করবেন না। কথা আছে তো।
সালমা: কোথায় দেখা করতে হবে আপনার সাথে?
শিবনাথ: বিকেলে দেখা করবেন…রাজবাড়ি ওইযে ডিসি অফিস পার হইয়া, রাজবাড়ি আছে না, রাজবাড়ির সামনে ওইদিকে …বিকেলে ফোন দিবেন। জ¦ী বলেই লাইনটি কেটে দেওয়া হয়েছে।

সালমা বেগম নিজেই এই অডিও রেকর্ডটি প্রতিবেদকের কাছে দিয়েছেন। তিনি জানান, আমার ভাই কখনো মাদকের সাথে জড়িত নয়। তারে পকেটে গাজাঁ দিয়ে ধরে তার জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য আম্মুর কাছ থেকে নেওয়া দুই হাজার টাকাও তার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে, আবার আমাকেও বিকেলে দেখা করতে ফোন দিয়েছে এটা কেমন কথা ; কি উদ্দেশ্যেই বা অনৈতিকভাবে এমনটি করেছেন পরিদর্শক শিবনাথ কুমার সাহা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কল দেওয়ার কথা স্বীকার করে রাঙামাটি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শিবনাথ কুমার সাহা বলেছেন, হ্যা আমি ফোন দিয়েছিলাম, তবে সেটি ছিল তার ভাইয়ের মাধ্যমে আমরা মূল গাঁজা বিক্রেতাকে ধরার তথ্য উদ্ধারের জন্য। কথোপকথনে যোগাযোগ কেন করলো না? এবং অফিস চলাকালীন সময়ে অফিসে না ডেকে বিকেলে রাজবাড়ির সামনে কেন তাকে আসতে বললেন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নাদিয়ে তিনি সকালে রাঙামাটির বাইরে ছিলেন বলে প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান।

এ বিষয়ে রাঙামাটি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান শরীফের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, এই ধরনের ঘটনার সাথে যদি কেউ জড়িত থাকে এবং এই বিষয়টি নিয়ে সংক্ষুব্ধ যে কেউ যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমানাদি দিয়ে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়, তাহলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।