লন্ডনে মেয়ের বাসায় সুপারস্টার ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্মদিন পালন

1069

ilias-kancon1-copy

 

রকিবুল ইসলাম সোহাগ- ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জল নক্ষত্র ইলিয়াস কাঞ্চন আমাদের মাঝে যুগ যুগ বেঁচে থাকুন এই কামনা সকলের। আজ এই জনপ্রিয়, শক্তিমান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্মদিন। ১৯৫৬ সালে এই দিনে তিনি জন্মগ্রহন করেন। তাকে জানাই অভিন্দন।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ৭ তারিখে তিনি লন্ডনে তার মেয়ের বাসায় গিয়েছেন এবং সেখানে তার মেয়ের আবদার রক্ষায় আজ তার জন্মদিনটি মেয়ের সাথেই আনন্দে কাটিয়ে ২৫ তারিখ এর ফ্লাইটে বাংলাদেশে রওনা দেবেন বলে জানা গেছে।

নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। রোমান্টিক, অ্যাকশন থেকে শুরু করে যে কোন ধরনের চরিত্রে সাবলীল ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারা এক দুরন্ত অভিনেতার নাম ইলিয়াস কাঞ্চন। বাংলা চলচ্চিত্রের গত শতাব্দীর সোনালি যুগের দুই দশক ছিল ইলিয়াস কাঞ্চন নামের এক ‘সুপারস্টার’ এর বিচরণ যিনি তাঁর অভিনয় দিয়ে কোটি মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন । জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকায় যিনি সেই সময়ে ‘সুপারস্টার’’ খেতাব পেয়েছিলেন চলচ্চিত্রপ্রেমি মানুষদের কাছ থেকে ।

যার ছবি দেখেনি এমন দর্শক পাওয়া যাবে না । যিনি খুব ধার্মিক রক্ষণশীল পরিবার থেকে চলচ্চিত্রে জড়িয়ে ছিলেন । কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় আশুতিয়াপাড়া গ্রামে ১৯৫৬ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর তারিখে জন্মগ্রহন করেন । তাঁর বাবার নাম হাজী আব্দুল আলী, মাতার নাম সরুফা খাতুন। তিনি ১৯৭৫ সালে কবি নজরুল সরকারী কলেজ থেকে এইস এস সি পাস করেন। পরবর্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ফিল্ম ডিরেক্টর সুভাষ দত্ত পরিচালিত বসুন্ধরা সিনামাতে ১৯৭৭ সালে চলিচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে অভিনেতা হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।

এর পর একে একে ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়ে তিনি চিরদিনের মত বাংলা চলচ্চিত্র প্রেমীদের অন্তরে জায়গা করে নেন। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র বেদের মেয়ে জোছনা। সীমাহীন কষ্টের এক অসাধারণ প্রেমের গল্প বেদের মেয়ে জোছনা তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে আসে। যা এখনো বাংলাদেশের প্রায় সকল সিনামা প্রেমিদের মনে জায়গা করে রেখেছে। এর পর তিনি অসংখ্য দর্শক প্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দেন। এবং ২০০৮সালে চলচ্চিত্র নির্মান করে একজন সফল পরিচালকের খাতায় নাম লেখান। পরপর তিনি দুটি দর্শক প্রিয় চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন। বাবা আমার বাবা এবং মায়ের স্বপ্ন। এছাড়াও তিনি বিভিন্য সময় ছোট পর্দায় নাটক টেলিফিল্ম নির্মান করছেন। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সচেতনমুলক অনেক নাটক ইতিমধ্যে নির্মান করে দর্শক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

 

লন্ডনে মেয়ে ইমা, জামাতা ও নাতনির সঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন
লন্ডনে মেয়ে ইমা, জামাতা ও নাতনির সঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন

বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক জনপ্রিয় গানের কথা মনে হলেই ভেসে উঠে ইলিয়াস কাঞ্চনের কথা কারন সেই সকল গানে পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন । ‘আমার গরুর গাড়ীতে বউ সাজিয়ে’’, ‘’ কথা বলবো না , বলেছি’’, ‘’আজ রাত সারারাত জেগে থাকবো ‘’, ‘’ সত্য কি? মিথ্যে কি’?’, ‘‘ পৃথিবীর যত সুখ ‘’ ‘’জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’’, ‘’ তুই তো কাল চলে যাবি’’, ‘’ প্রিয়া আমার প্রিয়া’’, ‘’ তুমি চেনো কি আমারে’’, ‘’ আমরা বাপবেটা ৪২০’’, ‘’আর যাবো না আমেরিকা’’, ‘’আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা’’, ‘’ বেলি ফুলের মালা দিয়ে’’, ‘’ আমি আজ কথা দিলাম আই লাভ ইউ’’, ‘’ ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয় ‘’, ‘’ আমার এ গান তোমারই জন্য ‘’, ‘’আমরা দুজন চিরসাথী’’, ‘’সবার জীবনে প্রেম আসে ‘’ৃৃএমন অসংখ্য গান আছে যা মনে হলেই ইলিয়াস কাঞ্চন এর কথা মনে পরবেই ।

অভিনয় জীবনে সহশিল্পি হিসেবে অনেকের সাথেই অভিনয় করেছিলেন কিন্তু চম্পা ও দিতি’র সাথে কাঞ্চনের জনপ্রিয়তা বেশি ছিল । বিশেষ করে ৮০র দশকের শেষ ভাগ থেকে ৯০ দশকে চম্পা ও দিতির সাথে কাঞ্চনের ছবিগুলো ছিল ব্যবসায়িক সফলতায় ভরপুর। যদিও অভিনয় জীবনের সেরা ব্যবসা সফল ছবিটি ছিল চিত্রনায়িকা অঞ্জুর সাথে তারপরেও অঞ্জুকে ছাপিয়ে দর্শকদের কাছে বেশি জনপ্রিয় ছিল কাঞ্চন-চম্পা ও কাঞ্চন-দিতি জুটির ছবিগুলো ।

বর্তমানেও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করছেন এবং চলতি মাসেও তার অভিনিত চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। অবাক করা বিষয় যেটি তা হলো তিনি এখনো অনেক চলচ্চিত্রে মুল চরিত্রে নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করে যাচ্ছেন । এবয়সে এসেও কেন্দ্রীয় চরিত্র তার দখলে। যা কিনা বাংলা চলচ্চিত্রে এই প্রথম একজন অভিনেতা যিনি কিনা সেই সাদাকালো যুগ থেকে এখনকার ডিজিটাল সময়ে এসেও নায়কের অভিনয় করে যাচ্ছেন সমান তালে। এমন অভিনয় শিল্পি বলা যায় দেশে খুব বিরল।

তিনি তার অভিনয় জীবনে অনেক গুলো পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮৬ সালে পরিণীতা এবং ২০০৬ শাস্তি চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউনডেশন পদক ১৯৯৬ সালে, মেরিল ভোরের কাগজ পুরস্কার ১৯৯৭ সালে। ফুলকুলি অ্যাওয়ার্ডস ১৯৯৮ সালে, জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ সমিতি পুরস্কার পান ১৯৯৮ সালে। ৩য় বাংলাদেশ ফ্লিম মুভমেন্ট পুরস্কার ১৯৯৯ সালে, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যান সংস্থা স্বর্ণপদক ২০০০ সালে, অন্যনা সাংস্কৃতিক ও সমাজকল্যাণ পরিষদ পুরস্কার শেখ সাঈদ বক্স স্মৃতি যুব পদক এবং বাংলাদেশ কালচারাল মুভমেন্ট অ্যাওয়াডস পান ২০০১ সালে।

এছাড়াও তিনি আজীবন জাতীয় সন্মাননা পুরুস্কার লাভ করেন। ব্যক্তি জীবনে ইলিয়াস কাঞ্চন সামাজিক আন্দলনে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তিনি তার স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্য হবার পর থেকে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে একটি সামাজিক আন্দোলন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যে আন্দোলন কিনা আজ একটি সফল আন্দোলনের নাম। এবছর ১লা ডিসেম্বর এই আন্দোলন ২৩ বছরে পদার্পন করেছে। ইলিয়াস কাঞ্চন তাঁর অভিনয় জীবনেই নিজেকে কিংবদন্তির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালি সময়ের সেরা মানুষগুলোর অন্যতম একজন তিনি যার কাজগুলো তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে এবং যতদিন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থাকবে ততদিন ইলিয়াস কাঞ্চন নামটি থাকবে । বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ইলিয়াস কাঞ্চন যেন সত্যিই এক ‘সুপারস্টার’ । আজ এই জনপ্রিয় শক্তিমান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্মদিনে তাকে জানাই অভিনন্দন। বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জল নক্ষত্র আমাদের মাঝে যুগ যুগ বেঁচে থাকুক এটাই সবার কামনা।

সম্পাদনা- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান, সূত্র- নিরাপদ নিউজ