১৪৫টি ক্ষত মেরামতে অবিরাম কাজ করছে সড়ক কর্মীরা:বৃহস্পতিবার থেকে যান চলাচল উপযোগী হবে রাঙামাটি মহাসড়ক

414


স্টাফ রিপোর্ট- ২০ জুন ২০১৭, দৈনিক রাঙামাটি:  বৃহস্পতিবারের মধ্যেই রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে রাঙামাটি সড়ক বিভাগ। তবে পাহাড় ধসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এই সড়কের ১০০ মিটার ভাঙা অংশে নতুন করে তৈরি করা সড়কটি দিয়ে প্রাথমিকভাবে হালকা যান চলাচল করতে পারবে। চলমান বর্ষা মওসুমে আরো বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় সড়কটি দিয়ে আপতত ভারি যানবাহন চলাচল করতে না পারলেও একমাসের মধ্যেই সড়কটির সংষ্কার কাজ শেষ করে তা সকল ধরনের যান চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেন।

সোমবার সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আফতাব উদ্দিন সড়ক মেরামত কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। এ সময় মাটি কাটতে কাটতে পাহাড়ের কোল ঘেষে একটি পে-লোডার ভাঙ্গা অংশ পার হয়ে রাঙামাটির দিকে চলে আসতে সক্ষম হয়। এসময় গত সাতদিন কঠোর পরিশ্রমে রত কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের মুখে হাসি ফুটে উঠে। এ যেন শত সাধনার ধন আবিস্কার করার মতো।

নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন জানান, ভয়াবহ পাহাড় ধসের পরদিনই সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী রাঙামাটি সফরে এসে রাঙামাটি থেকে বর্হির্গামী একমাত্র মহাসড়কটিকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে কাজ করার নির্দেশ দেন সড়ক বিভাগকে। তাঁর নির্দেশের আলোকে গত এক সপ্তাহ অবিরাম কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সড়ক বিভাগ। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা যখন কাজ এক প্রকার গুছিয়ে এনেছিলাম এমনি মূহুর্তে রোববার ও সোমবার আবারও ভারি বর্ষনের কারণে পাহাড় কেটে বের করা নতুন সড়কটির অনেকটাই আবার ধসে পড়ে। তবে এবার কৌশল পরিবর্তন করায় আর ধসে পড়ার তেমন কোনো আশঙ্কা থাকছে না বলে মত প্রকাশ করেছেন তিনি।

এমদাদ হোসেনের মতে আজ ও আগামী কাল মঙ্গলবার পুরোদিন কাজ করা গেলে বৃহস্পতিবার থেকে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে। তিনি জানান, পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করতে আমরা ৫টি পে-লোডার, ২টি এক্সেভেটর ও ৮টি ডাম্পিং ট্রাক দিয়ে অবিরাম কাজ করছি। এরমধ্যে ৩টি পেলোডারসহ ২টি এক্সেভেটর ও ৮ ডাম্প ট্রাকই সাপছড়ির ওই ভাঙ্গা অংশে কাজ করছে। এ ছাড়া ঘাগড়া চন্দ্রঘোনা সড়কে একটি এবং রাঙামাটি খাগড়াছড়ি সড়কে একটি পে-লোডার মাটি ও জঞ্জাল অপসারণের কাজ করছে। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এ কাজে ইসিবিও আমাদের যন্ত্রপাতিসহ সহায়তা করছে।

মঙ্গলবার নজির বিহীন পাহাড় ধস বিপর্যয়ে ৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সর্বমোট অন্ততঃ ছয়টি স্থানে পাহাড় ধস হয় এবং মূল পেভমেন্ট ও সোল্ডার ধসে পড়ে অন্তত আটটি স্থানে। এতে এই সড়কের ৪৯৫ মিটার সড়ক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জায়গাগুলো হলো মানিকছড়ি, সাপছড়ি, মগাছড়ি, কাশখালী, কলাবাগান, ফুরোমোন ও শালবাগান এলাকায়।

রাঙামাটি সড়ক বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, রাঙামাটি সড়ক বিভাগের অধীনে বর্তমমানে ২৪২ কিলোমিটার দূরত্বের সাতটি সড়ক রয়েছে। পাহাড় ধসে এইসব সড়কের ১৪৫টি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩৭টি স্থানে সড়ক ধসে গেছে। জাতীয় মহাসড়কটির (রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক) দুটি অংশে সড়কের অস্তিত্বই নেই। এছাড়া কয়েকটি স্থানে পভমেন্ট ও সোল্ডার ধসে পড়েছে (রাস্তার পাশ থেকে মাটি নেমে গেছে)। রাঙামাটি থেকে সাপছড়ি পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তায় দেখা গেছে, অন্তত ৪০টি স্থানে সড়কের ওপর পাশের পাহাড় ভেঙে পড়েছে। ২২টি স্থানে প্রধান সড়কটিতে বড় বড় ফাটল রয়েছে। কিছু অংশ পড়েও গেছে।

সড়কের সাপছড়ি এলাকায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া দেড়’শ মিটার সড়ক ধ্বংস হওয়ার মাত্র দুই কিলোমিটার পরেও প্রায় একই চিত্র দেখা যায়। সড়কের এক পাশ নেই। মাটি পড়ে স্তূপ হয়ে রয়েছে সড়কজুড়ে। সেখানে তিনটি বুলডোজার ও একটি এক্সভেটর দিয়ে সড়কের মেরামতকাজ করছিলেন সওজের প্রকৌশলী ও শ্রমিকেরা। অন্তত ১০টি স্থানে ১০০ মিটার করে অংশ মাটি পড়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে বলে তাঁরা জানান।

এদিকে রাঙামাটি জেলার সাথে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগও এখনো সচল হয়নি। এই রুটের অন্তত ৯টি স্থানে পাহাড় ধসের কারনে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে এবং বেশ কিছু এলাকার সড়ক পানির নীচে নিমজ্জিত। এই রুটের বেতছড়ি এলাকার ৭০ মিটার সড়ক সম্পূর্ন ধসে গেছে।

এছাড়াও নানিয়ারচর উপজেলার সাথেও লংগদু উপজেলার সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বগাছড়ি-নানিয়ারচর ও লংগদু সড়কটির অন্তত ৫টি স্থানে ৮৫ মিটার রাস্তা ক্ষতি সাধিত হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কের ঘাঘড়া তিনটি স্থানে পাহাড় ধস ও বৃষ্টির পানিতে দেবে গেছে অন্তত আটটি জায়গা। এছাড়া রানীর হাট-কাউখালীর ৫ কিলোমিটার সড়ক বর্তমানেও পানীর নীচে তলিয়ে রয়েছে। এদিকে রাঙামাটি শহরের প্রায় সবগুলো সড়কই ব্যাপকভাবে ভেঙ্গে গেছে। অভ্যন্তরীন সড়কগুলোর মধ্যে শহীদ মিনার থেকে পর্যটন সড়কের ৬টি স্পটে ২৫০ মিটার সড়ক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মন্ত্রী পাড়া এলাকায় ৩৫ মিটার সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের বিলাইছড়ি পাড়া ও বড়াদম এলাকার সড়কটিরও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

এ বিষয়ে সওজএর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু মুছা বলেন, রাতদিন কাজ করছি আমরা। আশা করা যায় বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাস্তাটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও জীপ, মোটর সাইকেল এর মতো যানগুলো চলাচলের উপযোগী হবে। ভারি বর্ষণে সোমবার সকালে আবারো ৫০ ফুট জায়গায় পাহাড় ধসে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আসলে আবহাওয়া অনুকুলে না থাকলে তো ভিন্ন কথা।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান ।