॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
কলেজেরে ছদ্মাবরণে সরকারের সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে স্বশস্র সংগঠন ইউপিডিএফ তাদের আস্তানা নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গায়ের জোরে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী মনে করছে কলেজ নির্মাণ নয়, মূলত সরকারি বনে এই স্থাপনাটি ইউপিডিএফের চাঁদাবাজী ঘাটি হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। তাদের একাধিকবার নোটিশ করার পরও তারা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞাকে পাত্তা দিচ্ছে না।
রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন সাজেক উজোবাজার এলাকায় সরকারের সংরক্ষিত বনভূমিতে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করছে পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। এই কাজে তারা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এলাকার কিছু নিরীহ মানুষকে ব্যবহারের চেষ্টা করলেও তারা মনেপ্রাণে এমন স্থাপনা নির্মাণের বিপক্ষে।
এলাকার বেশ কয়েকজন সচেতন যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কলেজের নামে করা এই অবৈধ স্থাপনাটি মূলত: তাদের স্বশস্র কার্যক্রম চালানোর ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। তারা সুপরিকল্পিত কলেজের কথা বলে সরকারি বনভূমি দখলের চেষ্টা করছে এবং এই স্থাপনা ঘিরে স্বশস্র ক্যাডারদের সংগঠিত করার পায়তারা করছে ইউপিডিএফ।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মার্চ মাসের দিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সংরক্ষিত বনাঞ্চল (রিজার্ভ ফরেস্ট) এলাকায় একটি টিনসেড দালান নির্মাণের কাজ শুরু করে একটি চক্র। বিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের নজরে এলে তারা লিখিতভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যে কোনো ধরণের স্থাপনা বা গৃহ নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা নির্দেশনা জারি করে। ‘সরকারি অনুমতি ছাড়া সংরক্ষিত বনভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ’ উল্লেখ করে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখা হলেও বুধবার (২৫জুন) দুপুর থেকে আবারো পালাক্রমে লোক জড়ো করে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ডিএফও এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি তাদের গোচরে আসার সাথে সাথে তারা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমূহকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে ডিফরেষ্ট ঘোষণা না করা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা সরকারি অন্য কোনো কাজের ব্যবহার করা আইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। স্বয়ং সরকার প্রধানের অনুমোদন স্বাপেক্ষে এমন ভূমি সরকারি অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়।
এ বিষয়ে বাঘাইহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবুধন চাকমাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, কলেজ নির্মাণের নামে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। সংরক্ষিত বনে এমন অবৈধ তৎপরতা চোখে পড়ার পর বাঘাইহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা লিখিতভাবে বিষয়টি ঊর্ধতনে অবহিত করেন। অবহিতকরণপত্রে বলা হয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন কাচালং সংরক্ষিত বনাঞ্চলের (রিজার্ভের) বাঘাইহাট রেঞ্জের আওতাধীন মাকশাছড়ি বিটের গঙ্গারাম পূর্ব ব্লকের ৮৪ নং কম্পার্টমেন্টে গঙ্গারাম বাজার সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২.০০(দুই) একর সরকারী বনভূমি জবরদখল করে কলেজ ভবন স্থাপনার কাজ করছে একটি মহল। এমন সংবাদ পেয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনকালীন ঘটনার সত্যতা খুজে পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমাকে তার দপ্তরের স্মারক নম্বর ২২.০১.৮৪০৭.৯০৯.০৮.০০০.২০২৫.১৬৩ তারিখ; ২০/০৫/২০২৫ খ্রিঃ মূলে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন কলেজ ভবন অপসারণ পূর্বক সরকারী সংরক্ষিত বনভূমি দখলমুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরপরও স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় তারা তারা শঙ্কিত। তিনি বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে বনের মধ্যে কলেজ নির্মাণ করা হলে বনাঞ্চলের বনজদ্রব্য, পরিবেশের ভারসাম্য ও বন্যপ্রাণী ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। এমন মন্তব্য জানিয়ে তিনি সরকারী সরকারি বনভূমি রক্ষায় মামলা দায়ের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপরে জানিয়েছেন।
কিন্তু এই চিঠি চালাচালিতে যে সন্ত্রাসীরা দমছে না তা বলাই বাহুল্য, এমন মন্তব্য করে সাজেক এলাকার একজন গ্রামবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “কলেজের নামে মূলত ইউপিডিএফ একটি সংগঠনিক ঘাঁটি নির্মাণ করছে। ভবিষ্যতে এখানে তারা সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের আশঙ্কা কলেজের নামে গ্রামবাসির কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা তোলা হবে।”
উল্লেখ্য, ইউপিডিএফ এর আগেও পার্বত্য অঞ্চলে সরকারি জমি জবর দখল করে তা চাঁদাবাজি এবং সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যবহারের নজির রয়েছে।