দুর্গম থানচির বিদ্যুতায়ন প্রকল্প ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

693

॥ নুরুল কবির বান্দরবান থেকে ॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বান্দরবানের দুর্গম থানচি উপজেলার বিদ্যুত প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। দুপুর দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ভিডিও কনফারেন্সে বিদ্যুত প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, বান্দরবান সেনা রিজিয়িন কমান্ডার যুবায়ের সালেহীন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জীব কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গম এলাকা থানচি আলোকিত হয়ে উঠেছে। তবে উদ্বোধনের আগেই এলাকার মানুষ বিদ্যুত সংযোগ নিয়েছেন।

বিদ্যুতের সুফল ভোগ করছেন ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষ। বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হওয়ায় দুর্গম এলাকার মানুষেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

জানা গেছে, এক সময় দুর্গমের খ্যাতি ছিল থানচি উপজেলার। জেলা শহর থেকে নৌকায় করে থানচি পৌছাতে সময় লাগতো অন্তত তিনদিন। এখন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতর হওয়ায় সময় লাগছে তিনঘন্টা।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে থানচি উপজেলার সাঙ্গু নদীতে একটি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। এই ব্রিজ নির্মাণের ফলে এলাকার মানুষের জনজীবনে এসেছে গতি। সড়ক, ব্রিজের পরে দুর্গম থানচিতে বিদ্যুত পৌছায় এলাকার মানুষের মধ্যে আরো গতি সঞ্চার বেড়েছে।

এলাকার মানুষের জীবন মান আরো উন্নতর হবে এমন প্রত্যাশা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের এপ্রিলে থানচিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হয়। আর শেষ হয় গত বছরের জুনে। একই বছরের আগস্টের দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ পায় থানচির মানুষ।

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১২ হাজার মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসবে। ক্রমান্বয়ে সব মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হবে। প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ কিলোমিটার ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন, ১১ কেভির ২৮ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন ও ১৭ কিলোমিটার বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে।

১৭টি ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে। ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বলীপাড়া বিজিবি’র উপকে›ন্দ্র (সাব ষ্টেশন) থেকে ৫ হাজার পরিবারকে আবাসিক সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। জেলা শহর থেকে ওয়াই জংশনের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার।

ওয়াই জংশনের সাব ষ্টেশন থেকে একটি বিদ্যুতের লাইন গেছে রুমা উপজেলায়। আর একটি চিম্বুক পর্যন্ত। নতুন প্রকল্পের আওতায় চিম্বুক থেকে বলীপাড়া পর্যন্ত নতুন সাব ষ্টেশন করা হয়েছে।

পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী (বান্দরবান) মো: মিজানুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, অগ্রসর এলাকার মত বিদ্যুত পাবেন থানচির মানুষ। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ফলে জীবনমান পাল্টে যাবে এখানকার মানুষের। কৃষি, পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটবে বিদ্যুত সরবরাহের কারণে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল আর নষ্ট হবে না।

থানচি ইউপি চেয়ারম্যান মাংসার ¤্রাে বলেন, চারটি থানা নিয়ে গঠিত থানচি উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও এখানকার মানুষ ছিল অন্ধকারে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কিছু সংখ্যক মানুষ সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করলেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছিল বিদ্যুত সুবিধার বাইরে। এখন বিদ্যুত সুবিধা পাওয়ায় এলাকার মানুষের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন ঘটবে।