॥ আলমগীর মানিক ॥
রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সেলফোন নং ক্লোনিং করে সাহস পাওয়ার পর এবার প্রতারকরা হাত বাড়িয়েছে জেলাপ্রশাসকের দিকে। পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে এবার প্রযুক্তি প্রতারণার শিকার হয়েছেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। তার ব্যবহৃত সরকারি টেলিটক নাম্বার ক্লোনিং করে নানাজনের কাছে বিভিন্ন অন্যায় আবদারসহ টাকা চেয়ে বসছে একটি চক্র।
বুধবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নাম্বারে কল করে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে টাকা দাবি করা হয়। বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাহিত টাকা পাঠানোর প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেন। এরই মধ্যে কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের নিকট ১০ হাজার টাকা হাওলাত চাওয়ায় বিষয়টি তার কাছে রহস্যজনক বিবেচিত হয়। তিনি টাকা পাঠানোর কথা জানিয়ে বিকাশ নাম্বার চেয়ে বসেন। এই সময়ের মধ্যে রুহুল আমিন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামনুর রশিদ এর ব্যক্তিগত নাম্বারে কল করে টাকা পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাওয়ার পর থেকেই প্রতারনার বিষয়টি বের হয়ে আসে। সাথে সাথেই ডিসি রাঙামাটি নামে জেলা প্রশাসকের নিজস্ব ফেসবুক একাউন্টে বিষয়টি উল্লেখ করে একটি ষ্ট্যোটাস এর মাধ্যমে সকলকে এই ধরনের প্রতারনায় বিশ্বাস নাকরে সজাগ থাকার আহবান জানান জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের অফিসিয়াল ফেইসবুক আইডি থেকে এক স্ট্যাটাসে জানানো হয়, “০১৫৫০-৬০১৪০১” জেলা প্রশাসকের এই অফিসিয়াল নাম্বারটি ক্লোন করে বিভিন্ন জনের কাছে ফোন করে টাকা দাবীসহ নানাবিধ অন্যায় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। উক্ত নাম্বার থেকে ফোন আসলে নিশ্চিত না হয়ে কোন কাজ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
বিষয়টি জানতে চাইলে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ এই প্রতিবেদককে জানান, আমি সরকারি একটি মিটিংয়ে অংশ নিতে চট্টগ্রামে অবস্থান করছি। কিন্তু আমার অনুপস্থিতিতে একটি চক্র আমার সরকারি নাম্বার ক্লোনিং করে সেটি দিয়ে বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও আমার অফিসের এডিসি, এনডিসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে কল করে নানাবিদ অন্যায় আবদারসহ টাকা চেয়ে বসে। এতে করে অনেকেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আমার কাছে ফোন করছে। জেলা প্রশাসক জানান, বিষয়টি বেশ বিব্রতকর। এই ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেবিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে পাহাড়ে সীম ক্লোনিং এর স্বীকার হয়েছেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এবছরের মার্চ মাসের ১০ তারিখ খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদুল ইসলামের সরকারি মোবাইল নাম্বার ক্লোন করে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবি করে। এছাড়াও মে মাসের ৬ তারিখ কাউখালী ও রাজস্থলী উপজেলার ইউএনও’র মোবাইল নাম্বার ক্লোন করে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারীদের ফোন করে বিকাশে টাকা দাবী করে দুর্বৃত্তরা। উক্ত ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও করা হয়। সংশ্লিষ্ট্যদের মতে, দূর্গমতার কারনে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকার পাহাড়ি এই অঞ্চলে সাইবার অপরাধ খুব সহজেই করা যায়, এমন মানসিকতা থেকেই একটি চক্র মোবাইল অপারেটরদের যোগসাজশে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই ধরনের প্রযুক্তি প্রতারনামূলক কর্মকান্ডগুলো করে যাচ্ছে। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে যুগোপযোগি আধুনিক সরঞ্জামের সংযোজন করা গেলে এই ধরনের সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে অন্যথায় এই ধরনের অপরাধী চক্রের হাত থেকে অত্রাঞ্চলের সাধারণ মানুষজনও রক্ষা পাবে না।