৩১ ডিসেম্বর আঞ্চলিক গানের রানী শেফালী ঘোষের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী

521

cms.somewhereinblog.net

 
ঢাকা ব্যুরো অফিস, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি : চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের রানী একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তী শিল্পী শেফালী ঘোষের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আগামী ৩১ ডিসেম্বর। ২০০৬ সালের ৩১  ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় জীবনের সকল মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে চিরকালের জন্য বিদায় নিয়েছিলেন শেফালী ঘোষ। আঞ্চলিক গানের ইতিহাসে সুদীর্ঘ ৪৫ বছর সাধনার হাজারো স্মৃতি রেখে ওই দিন তিনি এহধাম ত্যাগ করেন।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের এ শিল্পী শেফালী ঘোষের জন্ম ১১ জানুয়ারি ১৯৪১ সালে। চট্টগ্রামে শহরের অতিসন্নিকটে বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নে। পিতা কৃষ্ণ গোপাল ঘোষ মাতা আশালতা ঘোষ। চার ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে শেফালী ঘোষ ছিলেন দ্বিতীয়। ছোট বেলা থেকে শেফালী ঘোষ ছিল চঞ্চল প্রকৃতির। গান গাইতে চেষ্টা করতেন। যে কোন গান একবার মাত্র শুনলে সে নিজের মতো করে গাইতে পারতো। কচি কণ্ঠের গান শুনতো পাড়ার সকলে। শিশু শেফালীর এ প্রতিভা দেখে কৃষ্ণ গোপাল ঘোষ তার দারিদ্রতা আর সীমাবদ্ধতার কথা ভুলে গিয়ে মেয়েকে গান শিখাবে বলে মনস্থির করেন। শেফালী ঘোষ যখন প্রাইমারী পাঠ চুকিয়ে স্থানীয় মুক্তকেশী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তখনই তেজেন সেনের কাছে গান শিখতে শুরু করেন। গান আর পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেফালী।

১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাসের সাথে সাথে তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার সমাপ্তি ঘটে। ১৫৫৯ সালে নভেম্বর মাসে কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের নবীন বরণ উৎসবে স্টেজ প্রোগ্রাম করেন তিনি। দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রাচীন এবং স্বনামধন্য এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ মাঠে তার পারফর্মেন্স এর মাধ্যমে এলাকার মানুষ তাকে শিল্পী হিসেবে নুতনভাবে চিনতে শুরু করে। তারপরও কে জানত দরিদ্র পরিবারের এ মেয়েটি একদিন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হবে। বিদেশের মাটিতে দেশের সুনাম বয়ে আনবে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে বিশ্বের দরবারে। দর্শক শ্রোতাদের নয়নমনি হয়ে আজীবন বেঁচে থাকবে। চট্টগ্রামের সুখ দুঃখ গেঁথে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের সাথে জুটি বেঁধে শেফালী নান্দনিক ভঙ্গিমায় গান পরিবেশন করে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন। শেফালী ও শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের জুটি দেশ বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সংস্কৃতিমনা মানুষের মুখে মুখে এই জুটির প্রশংসার ধুম পড়ত। শেফালী ঘোষের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ তাঁর মায়াবী কণ্ঠ ও গায়কী ঢং যার জন্য তাকে হাজারো কণ্ঠ থেকে পৃথক করে চিনে নেওয়া যেতো।

আঞ্চলিক গানের এ রাণী শেফালী ঘোষ ভারত, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, শারজা, মালয়েশিয়া, জাপান, ব্রিটেন ও আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সংগীত পরিবেশন করে দেশের জন্য অপরিমেয় সুনাম বয়ে আনেন। ১৯৯০ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক পদক, ২০০৩ সালে শিল্পকলা একাডেমী পদক, ২০০২ সালে বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য সম্মাননা পদক ও ২০০৮ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন এ গুনী শিল্পী। চট্টগ্রামের মুকুটহীন আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষ ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সকলকে কাঁদিয়ে সেই শৈশবের অতিপরিচিত পিতৃ ভূমিতে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। সে স্থানে ২০০৮ সালে ১৯ জানুয়ারি নাম ফলক ও শিল্পীর আবক্ষ মূর্তি নির্মিত করা হয়।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান। সূত্র- অন্য মিডিয়া