ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদে বেনজীর আহমেদ: প্রতিবছর মাদক ব্যবসায় এক লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয়

387

স্টাফরিপোর্ট- ২৭ অক্টোবর ২০১৮, দৈনিক রাঙামাটি (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি):

সারাদেশে প্রতিবছর মাদক ব্যবসায় এক লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই লেনদেনের সাথে শুধুমাত্র গডফাদার নামক মাদক ব্যবসায়ীরাই জড়িত নয়, বিস্মকরভাবে সমাজের বিভিন্ন সম্মানজনক পেশার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও নানাভাবে জড়িত। এছাড়া আইন শৃঙ্খলাবাহিনীতে এ ভ‚ততো রয়েছেই। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো-এর আকার অনেক বড় এবং শিকড়-বাকড় অনেক গভীরে। সরকারের সদিচ্ছার সাথে জনগণের সদিচ্ছার মেলবন্ধন ঘটিয়ে মাদক নির্মূল করা সম্ভব।

আজ ২৭ অক্টোবর, শনিবার বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়াসংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে র‌্যাব-এর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে মক স্পীকার ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

র‌্যাব মহাপরিচালক আরও বলেন, গত মে মাস থেকে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করার পর রাজনীতিবিদদের অনেকেই তাদের নেতাকর্মী হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। রাজনীতিবিদদের উচিত এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলা। এ অভিযান শুরুর পরে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার মাদক কারবারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাদকের ভয়াবহতা এক ধরনের দুর্যোগ ও গজব। শুধুমাত্র আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এই গজব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। মাদকের গজব থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি সমস্ত জনগণকে এই মহাদুর্যোগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একই সাথে মাদক অপরাধীদের বিচার আরও দ্রæত করতে হবে। বর্তমানে মাদক সংশ্লিষ্ট মামলার বিচার হতে ১০-১২ বছর পর্যন্ত লেগে যায়, এটি এক ধরনের বিচারহীনতা যা মাদকের ভয়াবহতা নির্মূলের পথে এক ধরনের অন্তরায়। এ দেশে গুটিকয়েক অপরাধীকে মোকাবিলা করতে সাধারণ জনগণকে কাজে লাগাতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সম্প্রতি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালিত হলেও এখনও বড় বড় রাঘববোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় শুরু হওয়া মাদক বিরোধী অভিযানে এপর্যন্ত দুইশত জনের বেশি নিহত হওয়ার ঘটনা অভিযানের প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন করেছে। এই অভিযানে বেশিরভাগই মাদকসেবী বা এর সাথে যুক্ত খুচরা কারবারিদের চিহ্নিত করা গেলেও গডফাদাররা আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে। এরপরেও বলতে হয়, মাদকের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের কার্যক্রমের প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি সংসদে মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ উত্থাপন করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো-মাদক ব্যবসার যারা গডফাদার তারা সরাসরি মাদক পরিবহন, সরবরাহ, মজুত কোনোটাই করেন না তাহলে তাদের কীভাবে এই নতুন আইন দ্বারা শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হবে সেটাই এখন দেখবার বিষয়।

তিনি আরও বলেন, মাদকের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে দন্ড প্রদান, গ্রেপ্তারই একমাত্র সমাধান নয়, সবার আগে মাদকের সহজ লভ্যতার সব পথ বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও মাদকের বিস্তারের পাশপাশি চাহিদা কেন বাড়ছে তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, কর্মসংস্থানের অভাব, হতাশা, পারিবারিক সামাজিক বন্ধন কমে যাওয়া, নৈতিক অবক্ষয় ইত্যাদি কারণে মাদকের অপব্যবহার বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন জনাব কিরণ।

প্রতিযোগিতায় আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অফ ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি বিজয়ী হয়।
প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের সার্টিফিকেট ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মাহমুদ আল ফয়সল, ড. তাজুল ইসলাম তুহিন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম।

পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরো প্রধান।