ঢাকা ব্যুরো অফিস, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫, দৈনিক রাঙামাটি (প্রেস বিজ্ঞপ্তি) : রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আজ প্রীতিলতা ব্রিগেডের আয়োজনে পল্টনের মুক্তি ভবনের প্রগতি সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোকেয়ার স্বপ্ন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত। আলোচনাসভায় প্রীতিলতা ব্রিগেডের আহ্বায়ক লাকী আক্তারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ এ এন রাশেদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারপার্সন সোনিয়া নিশাত আমিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন ও স্থপতি ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক সাইয়্যেদা সুলতানা এনী। আলোচনাসভায় সূচনা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রীতিলতা ব্রিগেডের সংগঠক নাজনিন সুলতানা ফ্লোরা। সঞ্চালনা করেন প্রীতিলতা ব্রিগেডের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মৈত্রী ঘোষ।
আলোচনাসভার বক্তব্যে সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, তিনি আরও বলেন, নারীকে দমিয়ে রাখার জন্য সর্বত্র নারীর ভূমিকাকে অদৃশ্য করে দেয়া ও জ্ঞানের উপর নারীর অধিকার খর্ব করা হয়। নারী আন্দোলনে রোকেয়ার অনন্য ভূমিকা বর্ণনা করতে গিয়ে সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, এখন পাশ্চাত্যেও রোকেয়া পড়ানো হয়। বিশেষ করে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ রচনাটি পাশ্চাত্যের পণ্ডিতদেরও বিস্মিত করেছে। তিনি আরও বলেন, রোকেয়া ‘পর্দা’ ও ‘অবরোধ’ শব্দ দুটিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছেন। পর্দা কেবল নারীর জন্য নয় বরং পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য। কিন্তু তৎকালীন সমাজে অবরোধ প্রথা কেবল নারীদের জন্যই প্রযোজ্য ছিল।
অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন তাঁর আলোচনায় বলেন, শব্দের ক্ষমতা আছে। নানা পুরুষতান্ত্রিক শব্দ নারীকে অবদমিত করে রাখে। রোকেয়া যেমন ‘স্বামী’ শব্দটির পক্ষপাতী ছিলেন না। নারীকে ‘অর্ধাঙ্গী’ বললে পুরুষকে ‘অর্ধাঙ্গ’ বলতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশী নারী ওয়াসফিয়া নাজরিনের ‘সপ্তচূড়া’ জয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অনেকে এখনো নারীদের ‘অবলা’ বলছেন, অথচ নারীরা অবলীলায় দুর্গম পাহাড় বেয়ে চূড়ায় পদচিহ্ন রাখছে। তিনি আরও বলেন, নারীবাদ নারীর ব্যাপার নয়- পুরুষেরও।
শিক্ষাবিদ এ এন রাশেদা বলেন, প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামের অনুপস্থিতিতেই উগ্রবাদীরা ঠাঁই করে নিচ্ছে। ধর্মের মানবিক অনুশাসন না মেনে কেবল লেবসানির্ভর ধার্মিকতায় নারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। সমাজের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ার জন্য প্রীতিলতা ব্রিগেডের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের সংগঠিত করতে হবে কাজের জন্য। জানতে হবে পড়তে হবে কাজের জন্য, সমাজকে বদল করার জন্য।
সাইয়্যেদা সুলতানা এ্যানী বলেন, ২০১৫ সালে বসেও আমরা এখন রোকেয়ার মত চিন্তা করতে পারি না। তিনি বলেন, আজকে আমাদের সরকার ১৬ বছরে মেয়েদের বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন, অথচ ‘সুলতানার স্বপ্ন’-এ রোকেয়া বলেছেন ২১ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে হবে না।
সবশেষে সভাপ্রধানের বক্তব্যে লাকী আক্তার বলেন, আমরা মূলত দুটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রীতিলতা ব্রিগেডের যাত্রা শুরু করেছিলাম তা হচ্ছে, চিন্তা ও মননে নারীদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করা এবং আত্মরক্ষার জন্য তাদের প্রস্তুত করা। রোকেয়ার লেখা ও কাজ আমাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা ও আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ, সাংগঠিনক সম্পাদক সুমন সেন গুপ্ত, সহসভাপতি আল আমিন প্রমুখ।
বার্তা প্রেরক- কাজী রীতা
সদস্য, প্রীতি লতা ব্রিগেড
পোস্ট করেন- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান