রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উদয়ন সমিতি

387

॥ ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ॥
প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে রাঙামাটিতে বেআইনীভাবে সমিতির কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতি নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। রাঙামাটি জেলা ব্যস্থাপক পরিচয়দানকারী বান্দরবান থেকে আসা বিপ্লব চাকমাকে এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উল্টা তার কাজে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে দাবি করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম সম্পর্কে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় সমিতির সমস্ত কার্যক্রম অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। সে সময় স্বয়ং রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ তাঁর অফিসে ডেকে বিপ্লব চাকমাকে প্রয়োজনীয় বৈধ সকল কাগজপত্র দেখাতে বললে বিপ্লব কিছুই দেখাতে পারেনি।

জানা যায়, গত সোমবার সকাল থেকে বিপ্লব চাকমা শহরের টিটিসি’র মুখে একটি পাঁচতলা বিল্ডিং এ সমিতির অস্থায়ী অফিস কার্যালয়ে বসে লোক জন ডেকে এনে অবৈধ কর্মকান্ড আবারও পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে। সে আগের মত চাকরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং অতি শিগঘিরই সেই তথা কথিত “ক্লাইমেট চেইঞ্জ প্রকল্পের সার্ভে কাজ” শুরু হবে বলে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গরীব অসহায় বেকার লোকদেরকে ডেকে এনে অফিসের খরচ বলে ৫হাজার থেকে ১০হাজার করে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যা চাকরী প্রত্যাশীদের সাথে কথা বললে এর সত্যতা সহজেই পাওয়া যাবে।

সমিতির কার্যক্রম অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার জেলা প্রশসানের নির্দেশ থাকার সত্ত্বেও কিভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এমন প্রশ্ন করা হলে বিপ্লব চাকমা জানায়, সেটা সম্পূর্ণ ভূয়া খবর এবং জেলা প্রশাসন আমাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়নি বলে সে দাবি করে।

অথচ, বৈধ কাগজপত্র না থাকাতে গত ৯ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আরিফুল ইসলাম “উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতি”র সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে মুঠোফেনে সাংবাদিকদের জানান।

জানা যায়, গত মার্চ মাস থেকে দেশব্যাপী যখন দেশে করোনা ভাইরাসের জন্য লকডাউন চলছিল তখন থেকে তিনি প্রথমে রাঙ্গামাটি শহরের কল্যাণপুরস্থ সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক এর অফিসে বসে অফিস খুলে শত শত মানুষকে বিভিন্ন– পদে—শাখা ব্যবস্থাপক, সুপাভারইজার ও মাঠকর্মী পদে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সর্বনিম্ন ৫হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে চাকুরী প্রত্যাশী অনেকেই অভিযোগ করে আসছিল।

জলবায়ু পরিবর্তন ও কার্বন নি:সরন এর উপর প্রথমে সার্ভে কাজসহ তিন পার্বত্য জেলায় শতকোটি টাকার প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ করা হবে বলে বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চল থেকে আসা চাকরী প্রার্থী শত শত বেকার লোকদেরকে বোঝানো হচ্ছিল সেই প্রতারক বিপ্লব চাকমা কর্তৃক।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিপ্লব ইতিমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক লোকের কাছ থেকে আনুমানিক ১৫-২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যা তদন্তে বেড়িয়ে আসবে সহসাই। এই সেই বিপ্লব চাকমা ব্যক্তিগতভাবে একজন সম্পূর্ণ বেকার মানুষ। তার কোন কিছুই পেশা নেই এবং সে এধরনের নানা অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন কি তিনি ক্ষেত্র বিশেষে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকে বলে জানা গেছে। কিন্তু বাস্তবে সে পেশাগতভাবে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত নয় বলে বান্দরবানের পেশাগত সাংবাদকিদের সাথে কথা বলে খবর পাওয়া গেছে।

গত কয়েক দিন আগে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এই তথাকথিত সমিতির অবৈধ কর্মকান্ডের সংবাদ পরিবেশন করা হলে পরিশেষে জেলা প্রশাসনের নজরে আসলে জেলা প্রশাসন উক্ত সমিতির বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

গত সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এ ব্যাপারে ডিসি অফিসের এনডিসি আরিফুল ইসলামকে অবগত করলে বিষয়টি দেখা হবে বলে জানান সাংবাদিকদের। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বিপ্লব চাকমা তার সমিতি অফিসে স্বাভাবিকভাবেই কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে।