বিধিমালা লঙ্ঘন করে আলীকদমে কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারীর দৌরাত্ম

412

Untitled-1

 
স্টাফ রিপোর্টার, ১২ জানুয়ারি ২০১৬, দৈনিক রাঙামাটি : বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় কতিপয় ‘সরকারী কর্মচারি ও শিক্ষক আচরণ (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা- ১৯৮৫’ এবং ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা- ২০১২’ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কর্মকা- চালাচ্ছেন। সরকারী চাকুরী করেও স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে সংশ্লিষ্ট মহলকে ম্যানেজ করে এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা। সরকারী দায়িত্ব পালনের চেয়ে তারা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ ও দপ্তরসমুহ নীরব দর্শকের ভূমিকায়। একটি গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা স্থানীয় নাগরিক হয়ে থাকেন। নিয়োগের পর অন্যকোন উপজেলায় তাদের বদলীও তেমন একটা হয় না। দীর্ঘদিন এলাকায় থাকার কারণে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়ে সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরী জাহাঙ্গীর আলম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘরভাড়া নিয়ে প্রকাশ্যে কোচিং বাণিজ্য শুরু করে।

জানা গেছে, উপজেলার মংচিং হেডম্যান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ হোছেনগীর, রোয়াম্ভু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আলমগীর, আলীকদম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল আলম ও দপ্তরী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, আলীকদম আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল হান্নান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী লিটন কুমার শীল জোট বেধে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের জানুয়ারী থেকে সরকারী কর্মচারী বিধিমালা ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতি মালা লঙ্ঘন করে ‘অন্বেষা’ নামের একটি কোচিং সেন্টার চালু করে। ‘অন্বেষা’ নামে পাশাপাশি কৌশলে নাম দেওয়া হয় ‘ব্যক্তিক্রমধর্মী শিক্ষাঙ্গন!’

উপজেলার সদরের চৌমুহুনীতে রীতিমত ঘর ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড ও ব্যানার টাঙিয়ে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এসব কর্মচারী কোচিং বাণিজ্যের একবছর পার করেছে। স্থানীয় কয়েকজনকে সাইনবোর্ড সর্বস্ব রেখে কোচিং বাণিজ্য চালুর প্রাক্কালে নিজেদের পরিচয় আড়াল রাখে সুচতুর কর্মচারীরা। কিন্তু স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনের কোনরূপ নজরদারী না থাকায় এসব কর্মচারীরা এখন প্রকাশ্যে কর্মকা- চালাচ্ছে। কোচিং বাণিজ্যের প্রচারপত্র ও ব্যানারে যোগাযোগের ঠিকানায় তাদের মোবাইল নাম্বার দেয়াসহ শিক্ষার্থী শিকারে অভিভাবক পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। সরকারী দায়িত্ব পালন না করে আখের গুছাতে শিক্ষাবাণিজ্যে এসব কর্মচারীরা এখন চষে বেড়াছে বিভিন্ন পাড়া-এলাকা!

সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম দেড়যুগেরও বেশী একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছে। দীর্ঘদিন বদলী না হওয়ায় জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। চৌমুহুনীতে নিজ নামে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছে। সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ‘অন্বেষা’ কোচিং সেন্টার চালু করে সেখানকার পরিচালকও বনেছেন! তার এসব কর্মকা- নিয়ে ইতোপূর্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহর কুমার সিংহ তাকে সতর্ক করায় জহর সিংহকে নানাভাবে নাজেহাল করার অভিযোগ রয়েছে এ দপ্তরীর বিরুদ্ধে। করিৎকর্মা দপ্তরী জাহাঙ্গীর অন্বেষা’র পরিচালক হওয়া ছাড়াও টমটম মালিক সমিতির নেতা বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী লিটন কুমার শীল সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি ব্যক্তিউদ্যোগে বাণিজ্যিকভিত্তিতে হোস্টেল পরিচালনা, বিদেশী ডোনারদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক রেখে স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হোস্টেল পরিচালনার নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের ইপিআই ক্যাম্পিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অনুপস্থিত থাকলেও স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারঙ্গমতা দেখান। স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরাও তার ব্যাপারে মুখ খুলেন না বলে জানা গেছে।

পোস্ট- শামীমুল আহসান, ঢাকা ব্যুরোপ্রধান